খালি হাতে ফিরলেও শাহজাহানকে দ্রুত হাজিরার নির্দেশ ইডির, সিল করে দেওয়া হল বাড়িও

0
1

সাতসকালে সন্দেশখালি পৌঁছেও লাভের লাভ কিছুই হল না। কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। সামনেই লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election) আর তার আগে বাংলা-সহ একাধিক বিজেপি বিরোধী রাজ্যে এজেন্সি দিয়ে জোর করে গেরুয়ারাজের অভিযোগ আবার যেন সত্য প্রমাণিত হল। বুধবার সন্দেশখালির (Sandeshkhali) ঘটনার ১৮ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কাকভোরে ফের শেখ শাহজাহানের (Seikh Sahjahan) বাড়িতে দলবল নিয়ে হাজির হয় ইডি (Enforcement Directorate)। তবে সকাল থেকে লাফালাফি করলেও ইডির সমস্ত আশঙ্কা বা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হল। এদিন শাহজাহানকে খুঁজে পাওয়া তো দুরস্ত, তাঁর টিকিও ছুঁতে পারলেন না ইডি আধিকারিকরা। বুধবার সকালে তালা ভাঙার লোক নিয়ে গেলেও শেখ শাহজাহানের ঘরের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে বাধ্য হন ইডি আধিকারিকরা। এরপর সটান বাড়ির একের পর এক ঘরে ঢুকে চলে তল্লাশি। ঘরের থাকা সুটকেসের পাশাপাশি আলমারির তালা ভেঙেও জোর তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু কিছু জামাকাপড় ছাড়া শাহজাহানের বাড়ি থেকে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাননি ইডির আধিকারিকরা। তবে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার আগে শাহজাহান শেখের বাড়িতে নোটিশ (Notice) টাঙিয়ে ইডি জানিয়েছে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে হাজিরা (Summon) দিতে হবে শাহজাহানকে।

সরবেড়িয়ার আকুঞ্জপাড়া এলাকার শেখ শাহজাহানের পর চারটি বাড়ি রয়েছে। সূত্রের খবর, এদিন সেই চারটি বাড়িতেই ঘোরেন ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু সেখান থেকেও একেবারে খালি হাতেই ফিরতে হয় তদন্তকারীদের। কিন্তু এরপরই কিছু না পেয়ে বাড়ি সিল করে দেয় ইডি। বাড়ির বাইরে নোটিশ লাগিয়ে ২৯ জানুয়ারি তাঁকে হাজিরায় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিনের নোটিশে স্পষ্ট লেখা, রেশন বন্টন মামলায় শাহজাহানের হাজিরা জরুরি। তাই ২০০২ সালের আর্থিক তছরুপ বিরোধী আইনের ধারা অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারি সকাল ১১টার মধ্যে শাহজাহানকে কলকাতায় ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড এবং নিজের পাসপোর্ট ছবি।

তবে এদিন খালি হাতে ফিরলেও ইডি আধিকারিকরা শাহজাহানের বাড়ি থেকে কী কী উদ্ধার হয়েছে, তার একটি তালিকা বাড়ির দেওয়ালে সেঁটে দিয়েছে। ইডির সাফাই, শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে রেশন দুর্নীতি সংক্রান্ত সে অর্থে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায়নি। তবে দুটি নামী গহনা প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা সংস্থার টেক্সট ভয়েস, বিল উদ্ধার হয়েছে। ওই দুটি সংস্থা থেকে মোটা অঙ্কের গয়না কেনা হয়েছিল। পাশাপাশি শাহজাহান শেখের নামে একটি এলআইসি পলিসির অরিজিনাল কপি পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া শাহজাহানের বাড়ি থেকে মিলেছে ভিসা, ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট, এয়ার টিকিটের কাগজপত্রও। সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে বলে ইডি সূত্রে খবর। পাশাপাশি নির্বাচন সংক্রান্ত বেশকিছু কাগজপত্রও মিলেছে।  নির্বাচন সার্টিফিকেট ও ফর্মে শিবপ্রসাদ হাজরা, বিকাশ মণ্ডল ,প্রতিমা সরদার, সবিতা রায়ের নাম উল্লেখ রয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা রেশন বন্টন মামলায় এই তথ্যগুলি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও একাধিক বন্ড ও ডিড পেপার এবং শাহজাহানের ২০১৮ সালের মার্চ মাসের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের কাগজপত্রও তাঁদের হাতে এসেছে বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের।

 

 

সময় যত গড়াচ্ছে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের নাস্তানাবুদ করতে জোর করে সিবিআই-ইডি দেখিয়ে ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। এই অভিযোগ প্রথম থেকেই করে আসছে বিরোধীরা। আর বুধবার কার্যত হাতে কিছু না পেয়ে খালি হাতেই সন্দেশখালি থেকে ফিরতে হল ইডিকে। তবে এদিনের হানা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করুন। আজ দেখুন, রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কী মসৃণভাবে সবটা এগোচ্ছে। ইডি যেন সন্দেশখালির জামাই!”