তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন, কংগ্রেসকে তোপ দেগে পাঞ্জাবেও সঙ্গে জোটে নারাজ আপ

0
1

বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে যাবে না তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি এবার পাঞ্জাবের আম আদমি পার্টির তরফেও জানিয়ে দেওয়া হল, সে রাজ্যে একা লড়বে আপ। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কোন প্রশ্নই নেই। তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, নির্বাচনী জোট হওয়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মান ও আসন সংক্রান্ত দাবির যৌক্তিকতা থাকা উচিত। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ইস্যুতে আপের বক্তব্য, এরাজ্যে বিজেপি বিরোধী প্রধান দল তৃণমূল কংগ্রস। স্বাভাবিকভাবেই তাদের বক্তব্যই গুরুত্বপূর্ণ। এরাজ্যে তৃণমূলের শর্তে মান্যতা দেওয়া উচিত কংগ্রেসের।

বাংলায় তৃণমূল একাই লড়বে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই ইন্ডিয়ার শরিক বাকি দলগুলির তরফে এই ইস্যুতে মন্তব্য করা হয়েছে। দিল্লি ও পাঞ্জাবের শাসকদল আপ এক্ষেত্রে সরাসরি সমর্থন করেছে তৃণমূলকে। পাশাপাশি আপ শাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবান মান জানিয়ে দেন, পাঞ্জাবের ১৩ লোকসভা আসনের ১৩ টিতেই জিতবে আপ। কোনও আসন ছাড়া হবে না কংগ্রেসের জন্য। কেজরিওয়ালও মানের এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। এদিকে বাংলায় দুই দলের জোট হল না কেন তা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে আম আদমি পার্টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে এই সিদ্ধান্তের জন্য কংগ্রেসের ভূমিকাকেই দায়ী করেছে। দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা যে কায়দায় ধারাবাহিকভাবে তৃণমূলকে নিশানা করে চলেছেন তাতে বাংলায় দু’দলের সমঝোতা হওয়া কঠিন। তৃণমূলের দাবি, বারবার সময়সীমা দেওয়ার পরেও আসন রফা নিশ্চিত করা হয়নি। সেই কারণেই ভেস্তে গিয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের জোট। তৃণমূলের স্পষ্ট মত, অপেক্ষার একটা সময়সীমা থাকা দরকার। অযথা টালবাহানা করে সময় নষ্ট করছে কংগ্রেস।

গত জুন মাসে ইন্ডিয়া জোটের প্রথম বৈঠকেই আসন ভাগাভাগি নিশ্চিত করার দাবি তুলেছিল তৃণমূল। সেই অনুযায়ী জোটের একটি ফর্মূলাও দেওয়া হয়। তারপর সাতমাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি কংগ্রেস নেতৃত্ব। শেষ বৈঠকে তৃণমূলের তরফে আসন রফা নিশ্চিত করার জন্য ৩১ ডিসেম্বর সময়সীমা দেওয়া হয়। যদিও সেই সময়ের মধ্যেও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এদিকে দুই দলের মধ্যে যখন জোট জল্পনা দানা বাঁধছে, সেই সময়ে প্রায় দৈনিক নিয়ম করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূলকে আক্রমণ করে কার্যত বিজেপির সুরেই কথা বলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও তাঁর তৃণমূল বিরোধিতায় কোনও লাগাম টানেনি। ফলে জোটের পরিবেশ শুরু থেকেই বিঘ্নিত হয়েছে।

বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে আপ নেতা এবং দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বড় দল। ধারাবাহিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে সবসময়েই লড়াই করেছে কংগ্রেস এবং বামেরা। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল তো হবেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির তৃণমূল বিরোধিতা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, আমার মনে হয় তাঁর এধরণের মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। যখন সমঝোতার আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে তখন প্রায়ই বাংলার কংগ্রেস সভাপতিকে উল্টো বক্তব্য রাখতে দেখেছি। তিনি ধারাবাহিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন। এদিকে এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দিদি। আমরা তাঁকে ভালবাসি এবং সম্মান করি। ইন্ডিয়া জোট ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। প্রতিটি রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা। শিবসেনা (ইউবিটি) সভাপতি উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্যের মন্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় সিংহের মতো লড়াই করেছেন। তাঁর রাজ্যের জন্য এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।