‘ছান্দসিক’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী: নস্টালজিক ব্রাত্য, কবির জন্মশতবর্ষে স্মৃতির সরণিতে বাংলা আকাদেমি

0
1

‘অমলকান্তি’ আজও রোদ্দুর হতে পারেনি, কিন্তু তাঁর স্রষ্টা যে স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিলেন দুচোখে আজ এত বছর পেরিয়ে কেমন আছে সেই ভাবনারা? বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভূত আধুনিক বাংলা কবিদের অন্যতম নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর (Nirendranath Chakraborty) জন্মশতবর্ষে ঠিক এই প্রশ্নটাই সবার আগে উঠে আসে। ১৯২৪-এর ১৯ অক্টোবর কবির জন্ম। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি (West Bengal Bangla Academy) সঙ্গে তিনি দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। সেই প্রাঙ্গণেই ২৩ জানুয়ারি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এদিন উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়(Shirshendu Mukhopadhyay), বাংলা আকাদেমির সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu), মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen), আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি-পুত্র কৃষ্ণরূপ চক্রবর্তী, কন্যা সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিউলি সরকার।

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মশতবর্ষ উদযাপন (Birth Centenary Celebration of Nirendranath Chakraborty) করতে এক বিশেষ কমিটি গঠন কথা হয়েছে। সেই কমিটির সভাপতি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। সহ-সভাপতি মণ্ডলীতে রয়েছেন কবি – সাহিত্যিক জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, শিক্ষামন্ত্রী ও বিশিষ্ট নাট্যকার ব্রাত্য বসু এবং রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। কমিটিতে যুক্ত হবেন প্রচেত গুপ্ত। কথায় আর স্মৃতিচারণায় ফিরল কবির কর্মজীবনের প্রসঙ্গ। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে প্রথম কবিতা লিখেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ। ১৯৫৪ সালে প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন’ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি যেমন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তাঁর কবিতায়, ঠিক তেমনই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন সামন্ততান্ত্রিক জমিদার, জোতদার সমাজ ব্যবস্থার দিকে। মানবতার অবমাননা তিনি সহ্য করতে পারেননি, তাই বারবার প্রতিবাদের ভাষা হয়েছে তাঁর বলিষ্ঠ কলম। তবে তাতেও মিশেছে মাধুর্য। সমকালীন জীবনের ভণ্ডামি, শােষণ ও অবিচার ব্যঙ্গের রূপে ছন্দের আশ্রয় নিয়েছে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সৃষ্টিতে। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জানান, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা বড়ই সুখপাঠ্য। জীবনের গতিকে কখনই শ্লথ হতে দেননি ‘উলঙ্গ রাজা’র স্রষ্টা। বিস্মৃতির এই যুগে বাংলা অ্যাকাডেমির এবং কবি পরিবারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর (Nirendranath Chakraborty) জন্মশতবর্ষে বছরভর সাহিত্য আকাদেমির অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandopadhyay) জানান, কবি পরিবারের চেয়েছিল বাংলা অ্যাকাডেমি এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হোক। এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ইন্দ্রনীল সেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান এই শতবর্ষ উদযাপন কমিটির মূল উদ্দেশ্য হল কবির সৃষ্টিকে রাজ্য জুড়ে আরও বিস্তার করা। সাহিত্য অ্যাকাডেমি আগামী ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছে, যেখানে মাধব কৌশিক আসছেন। মেকার্স অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার কবিকে নিয়ে একটি বিশেষ নিবেদন উপস্থাপিত করবে। পাশাপাশি বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর হাত দিয়ে বিশেষ স্মারক প্রকাশের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ইন্দ্রনীল সেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কবির কবিতায় সুর করার সুযোগ হয়েছিল একবার। সেই বিড়লা অ্যাকাডেমি থেকে আজ বাংলা অ্যাকাডেমিতে এসে পৌঁছেছি এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই কমিটির সহ সভাপতি না করা হলেও গায়ক হিসেবেও আমি যুক্ত থাকতাম। সারা বছর ধরে কবির জন্ম উৎসবের সব অনুষ্ঠান সফল করব। এই প্রজন্ম যাতে বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতিকে আরও ভালভাবে জানতে পারে সেই চেষ্টা করবে তথ্য সংস্কৃতি দফতর।’

কবিপুত্র ও কন্যারা চান আরও বেশি করে নীরেন্দ্রনাথের সাহিত্য ছড়িয়ে পড়ুক বিভিন্ন প্রান্তে। “বাবা তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে দিয়েই শতবর্ষ পেরিয়ে আরও এগিয়ে যাবেন”, আশাবাদী শিউলি সরকার। এদিন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বেশ নস্টালজিক হয়ে পড়েন। তাঁর কথায়, “ছান্দসিক রূপে পেয়েছিলাম কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে। ‘কবিতার ক্লাস’ বই হাতে দিয়ে বাবা বলেছিলেন, লেখালিখি করতে হলে এই বই পড়া দরকার।” ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) বলেন, জীবনের নেতিবাচকতা নয় বরং সুন্দর সমাজের প্রতিচ্ছবি যেন দেখতে পছন্দ করতেন কবি। তাই হয়তো নিজের তৈরি ছন…