হিংসায় দগ্ধ মণিপুর, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো দেশের জ্বলন্ত সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে রামের নামে ভোট বৈতরনী পারের চেষ্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। অযোধ্যায় রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর দৃপ্ত কণ্ঠে মোদির বার্তা ‘রামই সমাধান’। ২৪-এর লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে এদিনের সভামঞ্চ থেকে ফের ”রাম রাজ্য’-এর ফানুস ওড়ালেন মোদি। নিজের ভাষণের পরতে পরতে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, রামের পুজোতেই দেশের বিকাশ। পাশাপাশি বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি জানালেন, “হয়তো ভক্তিতেই ঘাটতি ছিল, তাই মন্দির প্রতিষ্ঠাতে এতটা সময় লেগে গেল।”
রাজনীতির সার কথা ‘মানুষের সার্বিক উন্নয়ন’কে ছুড়ে ফেলে, দেশকে ‘রাম ভরসে’ ছেড়ে দিয়ে ধর্মের নামে রাজনীতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল সোমবার মোদির ভাষণে। এদিন সুর চড়িয়ে তিনি জানান, “রাম মন্দির উদ্বোধন নতুন যুগের সূচনা। আমাদের রামলালা আর তঁবুতে থাকবে না। এবার থেকে সে থাকবে দিব্য মন্দিরে। আমার বিশ্বাস যা গঠিত হয়েছে, এই অনুভূতি দেশের, বিশ্বের সকল রাম ভক্ত এই মুহূর্তে অনুভব করছেন। এই মুহূর্ত পবিত্র। এই মুহূর্ত শ্রী রামের আশীর্বাদ আমাদের সকলের ওপর।” এছাড়াও রামমন্দির ঘিরে হাজার বিতর্ক, মন্দির তৈরির আগের দীর্ঘ সময়কালের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল, যখন কিছু লোক বলতেন, রাম মন্দির তৈরি হলে আগুন জ্বলবে, এরকম লোকেরা ভারতের সামাজিক ভাবনার পবিত্রতা জানতে পারেননি। রাম লালার এই মন্দির নির্মাণ ভারতের সামাজের শান্তি, ধৈর্যের প্রতীক। এই নির্মাণ কোন আগুনকে নয়, বরং জন্ম দিচ্ছে উজালার।”
এদিন বক্তব্য রাখার সময় আশপাশে দৈব আত্মাদের উপস্থিতিও টের পান প্রধানমন্ত্রী। আবেগ বিহ্বল হয়ে মোদি বলেন, “অনুভব করছি মঙ্গলময় স্থানে পবিত্র দিনে দৈব আত্মাদের উপস্থিতি। অনুভব করছি কালচক্রে বদলাচ্ছে। ‘এহি সময় হ্যায়, সহি সময় হ্যয়’।” বাল্মিকীর শ্লোকও পাঠ করতে দেখা যায় মোদিকে। যার অর্থ “আগামী হাজার বছরের জন্য প্রতিষ্ঠিত হল রামরাজ্য।” তবে দীর্ঘ ভাষণে ‘রামময়’ মোদির মুখে দেশের অগ্রগতি নিয়ে শোনা গেল না একটিও শব্দ। বরং দেশের জ্বলন্ত সমস্যাগুলিকে পাশ কাটিয়ে মোদি বার্তা দিলেন, ‘রামই সমাধান।’ ধর্মের নামে এহেন রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, “দেশ কি তবে রাম ভরসে।”