বিজেপির রামরাজ্যে বিনা দোষে জেলে মুসলিম কিশোর, বাড়িতে চলল বুলডোজার

0
1

বিনা অপরাধে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে পাঁচ মাস জেল খাটলো এক কিশোর। সরকারের বুলডোজারের তলায় পিষে গেল তার পরিবারের বাসস্থান। মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়ন শহরে সংখ্যালঘু এক কিশোরের বিরুদ্ধে দেখা গেল রাম রাজ্যের সুশাসনের এমনই নমুনা। তবে মজার ব্যাপার হল যে বড় অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে তড়িঘড়ি জেলে পোরা হল সেই মামলায় খোদ অভিযোগকারী এবং প্রধান সাক্ষী কিশোরকে শনাক্তই করতে পারেনি।

১৮ বছর বয়সী আদনান মনসুরি হিন্দু ধর্মীয় মিছিলে থুথু ফেলার অভিযোগে ১৫১ দিন বিচার বিভাগীয় হেফাজতে কাটিয়েছে। ঘটনার পরপরই তার বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, বে-আইনি দখলের অভিযোগে, এবং পরিবারকে অন্য ঠিকানা খুঁজতে হয়। পাঁচ মাস জেলে থাকার পর, কিশোর জামিনে বেরিয়ে এসেছে কারণ অভিযোগকারী, প্রধান সাক্ষীও তাকে শনাক্ত করতে পারেনি। তার নাবালক ভাই এবং তার তুতো ভাইও একজন নাবালক, এই মামলার অন্য দুই আসামি। তারা আগেই জামিন পেয়েছে। গত বছর ১৭ জুলাই, আদনান এবং তার দুই ভাই বারান্দায় ছিলেন যখন ভগবান মহাকালের একটি শোভাযাত্রা ভক্তরা তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বের করেছিল। তখন হঠাৎই কেউ চিৎকার করে বলে, “ওরা থুতু ফেলছে”। এর পরেই হেনস্তা শুরু হয়। তিন ভাইকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। মামলা করেন সাওয়ন লট নামের এক ব্যক্তি। একদিন পরে আদনানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বুলডোজারে। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, দখলি জমিতে থাকা বাড়ি ভাঙা হয়েছে। বাড়ি ভাঙার সময় ডিজে, ঢোল বাজিয়ে নাচতে দেখা যায় স্থানীয় যুবকদের। এই বিষয়ে বিজেপির স্থানীয় মুখপাত্র আশিস আগরওয়াল বলেন, “যারা ভবগান শিবকে অসম্মান করবে তাদের শিব তাণ্ডবের জন্যও তৈরি থাকতে হবে।” এদিকে আদনান এবং তার ভাইদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, শত্রুতা প্রচার, ধর্মীয় সমাবেশে বিঘ্ন ঘটানো এবং দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ আনা হয়।

তবে আদালতে মামলার শুনানিতে দেখা যায় এই ঘটনায় মামলাকারী ও সাক্ষী দুজনের কেউই অভিযুক্তকে চেনেনই না। সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রশ্নের উত্তরে মামলাকারী সাওয়ান লট বলেন, তিনি আদনানকে চিনতেন না। তার কথায়, “যে ছেলেটির ভিডিও আমাকে দেখানো হয়েছে, আমি তাকে চিনি না। জেল থেকে আদালতে সরাসরি ভিডিও কল করা হয়েছিল। আমি তাকে শনাক্ত করতে অস্বীকার করেছি।” লট বলেছেন, তিনি ১৭ জুলাই ঘটনার স্থানে অন্য দুই ছেলেকে দেখেছিলেন এবং তাদের শনাক্ত করেছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, কীসের ভিত্তিতে মামলা হয়েছিল, হেনস্তাই কি উদ্দেশ্য ছিল? খারাকুওয়া থানা, যেখানে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল এই ঘটনায়, সেখানকার পুলিশ কর্তৃপক্ষও মুখে কুলুপ এঁটেছে।