BJP-RSSএর কাছে মূল্যহীন মণিপুর! মোদিকে কটাক্ষ করে থৌবাল থেকেই যাত্রা শুরু রাহুলের

0
15

নজরে লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election)। আর সেই নির্বাচনকেই পাখির চোখ করে ফের পথে রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। রবিবার থেকেই শুরু ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা (Bharat Jodo Naay Yatra)। এদিন কংগ্রেসের (Congress) দ্বিতীয় ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় যোগ দিতে সাতসকালেই মণিপুরের (Manipur) রাজধানী ইম্ফলে পৌঁছন রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড। মণিপুরের থৌবল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করলেন সোনিয়া তনয়। প্রথমে গোষ্ঠীহিংসায় জর্জরিত উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে কংগ্রেসকে তাদের কর্মসূচি পালনের অনুমতি পাওয়া নিয়ে চরম সংশয় ছিল। তবে রবিবার জেলা প্রশাসনের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেওয়া হয় কংগ্রেস নেতৃত্বকে।

এদিন যাত্রা শুরুর আগে রাহুল গান্ধী তাঁর বক্তব্যে ভারত জড়ো ন্যায় যাত্রা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরব হন। তবে বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশেই ছিল বিজেপি ও আরএসএসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ। এদিন রাহুল মনে করিয়ে দেন, ২৯ জুনের পর মণিপুর আর মণিপুরে নেই। আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম দেশের কোনও এক রাজ্যে গেলাম সেখানে সরকার বলে কিছুই নেই। গণতন্ত্রকে ‘বুলডোজ’ করেছে বিজেপি। এরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একহাত নিয়ে রাহুল বলেন, আরএসএস এবং বিজেপির কাছে মণিপুরের কোনও মূল্যই নেই। আর সেকারণে এখানকার এত খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের পাশে একবারের জন্য এসে দাঁড়াননি প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া রাহুলে এদিনের বক্তব্যে ভারত জোড়ো যাত্রার থেকে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার মিল এবং পার্থক্য বুঝিয়ে দেন রাহুল। তিনি মণিপুরে সুশাসন প্রতিস্থার পাশাপাশি মণিপুরে কংগ্রেসের হারন কারণও ব্যাখ্যা করেন কংগ্রেস নেতা।

অন্যদিকে, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বক্তব্যের শুরুতেই ভারত জোড়ো যাত্রার পাশাপাশি ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে করিয়ে দেন। পাশাপাশি এই যাত্রার জন্য রাহুল্কে আন্ত্রিক শুভেচ্ছাও জানান কংগ্রেস সভাপতি। তবে এদিন প্রধান্মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি খাড়গে। তিনি সাফ জানান, মুখে রাম আর বগলে ছুরি নিয়ে রাজনীতির চেষ্টা করছেন। ভোটের জন্য এই নোংরা রাজনীতি মানুষের সঙ্গে না করার অনুরোধ জানান তিনি। খাড়গে মনে করিয়ে দেন রাজনীতিগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুণ কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষের চরম ক্ষতি হয়। পাশাপাশি বিরোধী সাংসদদের জোর করে সাসপেন্ড করার মোদির ‘তুঘলকি শাসনের’ তীব্র প্রতিবাদ করেন তিনি। এছাড়াও মণিপুরে বিজেপি ও আরএসএসের পদক্ষেপের চরম সমালোচনা করেন খাড়গে। তিনি মনে করিয়ে দেন মণিপুরের এই অবস্থার জন্য দায়ি শুধুমাত্র বিজেপি ও আরএসএস।

এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মল্লিকার্জুন খাড়গে, অশোক গেহলট, জয়রাম রমেশের মতো হেভিওয়েট নেতাদের পাশাপাশি ইম্ফলে এসে পৌঁছেন বিএসপির সাসপেন্ডেড সাংসদ দানিশ আলিও। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, এই যাত্রায় আগাগোড়াই সামিল হবেন তিনি। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, টানা ৬৭ দিন ধরে এই যাত্রা ১৫ রাজ্যের ১১০টি জেলা ছুঁয়ে মার্চের ২০-২১ তারিখে মুম্বাইয়ে শেষ হবে। তবে প্রথম ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার মতো সম্পূর্ণ পথ পায়ে হেঁটে নয়, বেশকিছুটা পথ বাসে চেপে এই যাত্রায় সামিল হবেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে রবিবার থেকে পথচলা শুরু হলেও মণিপুরের ১০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের পর এই যাত্রা পৌঁছবে উত্তর-পূর্বের আরও এক রাজ্য নাগাল্যান্ডে। তারপর অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয় হয়ে রাহুল অ্যান্ড কোং এসে পৌঁছনোর কথা পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ দিন ধরে সাতটি জেলার মোট ৫২৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বিহারে ঢুকবেন রাহুল। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট হয়ে মহারাষ্ট্রে এসে শেষ হবে এই যাত্রা।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কন্যাকুমারী থেকে ভারত জোড়ো যাত্রার সূচনা করেছিলেন রাহুল। ২০২৩ সালে তা জম্মু-কাশ্মীরে এসে শেষ হয়। আর লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ফর্মুলাকে কাজে লাগাতেই ফের পথে নামলেন রাহুল। এদিন তাঁর নেতৃত্বেই শুরু হল ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার। তবে কংগ্রেস মুখে যতই বলুক নির্বাচনের সঙ্গে এই যাত্রার কোনও যোগাযোগ নেই, তবুও মুখে না বললে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই যাত্রা কংগ্রেসকে কোনও মাইলেজ দিতে পারে কী না তা সময় বলবে।