চোপ! ‘সৃষ্টি’-র বিচার চলছে: নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি দেখাল সংলাপের নাটক

0
3

জয়িতা মৌলিক

নাটকটি মূল রচয়িতা বিজয় তেন্ডুলকর। প্রায় ৫০বছর আগে মারাটি-তে লিখেছিলেন এই নাটক (Drama)। সেটিই বাংলায় উপস্থাপনা করছে ‘সংলাপ’। ‘চোপ! আদালত চলছে’। আর তাতেই স্পষ্ট ৫০বছর আগেও নারীর স্থান সমাজের যেখানে ছিল, বর্তমানে তার ফারক হয়েছে সামন্য। একজন শিক্ষিতা, আধুনিকা যখন নিজের পছন্দে কাউকে আপন করে নেন, তখন তিনি বিবাহিত কি না সেই প্রশ্নই বড় হয়ে ওঠে। আঙুল ওঠে তাঁর চরিত্রের দিকে। নাটকে (Drama) সেই চরিত্রে নাম সৃষ্টি। দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে অভিনয় করা শর্মিলা বসু (Sharmila Basu) এই চরিত্রে কার্যত মঞ্চ শাসন করলেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন বাকিরা। এখানে অন্য নারী চরিত্র বেনু-র ভূমিকায় অভিনয় করা শিপ্রা পালের কথা বলতেই হয়। একদল তথাকথিত রুচিশীল মানুষের সামনে যেভাবে নিজের চরিত্রের কথন নাটকে আগাগোড়া তিনি বজায় রেখেছেন সেটা নিঃসন্দেহে তারিফ যোগ্য।

সমাজের বিভিন্ন স্তরের আটজন মানুষের একটি দল একটা ছোট শহরে যায়। সেখানে কোর্ট রুম ড্রামার মহড়া শুরু হয়। কিন্তু যে নাটকটি তারা করবে ভেবেছিল, সেটা নয়। একটি কাল্পনিক ঘটনাকে নাট্যরূপ দেওয়া হয়। কিন্তু সত্যিই কি কাল্পনিক? না কি আগে থেকেই একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে নিয়ে শুধু আদালত আদালত খেলা? আর সেখানেই উঠে আসে সমাজে নারীর স্থান কোথায়! আজও একশ্রেণির মানুষ নারী স্বাধীনতাকে কী চোখে দ্যাখে! সমসাময়িক প্রসঙ্গ “চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন” বা “খেলা হবে” স্লোগানও বিভিন্ন ভাবে এসেছে এখানে।

নাটকটি বাংলায় সৃজন ও নির্দশন করেছেন কুন্তল মুখোপাধ্যায়। প্রযোজনা ও নিয়ন্ত্রণ গুরুপদ মিত্রের। নিজে উকিলের ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন তিনি। অন্যান্য ভূমিকায় ছিলেন কাজল শম্ভু, সৌরভ পয়ড়া, গুরুপদ মিত্র, অমল আচার্য্য, শান্তনু পাল, বিতানবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, ও বাদল লাহিড়ী। সকলেই নিজেদের চরিত্রের প্রতি সুবিচার করেছেন। তবে, সৌরভ পয়ড়া ও গুরুপদ মিত্র আলাদা করে নজর কেড়েছেন। সংলাপের কিছু খমতি পুষিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। অভিনয়ের পাশাপাশি পোশাকের দায়িত্বেও ছিলেন শর্মিলা। সৌমেন চক্রবর্তীর আলো মনে রাখার মতো। সৌরভের মঞ্চসজ্জায় যথাযথ। নাটকের প্রথম থেকে যেটা কে ভাঙা ঘড়ি মনে হচ্ছিল। সেটা শেষ দৃশ্যে হয়ে ওঠে নারীর মুখ।