ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পরও উত্তরকাশীর টানেল প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিতে চায় না বিজেপি সরকার! ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত। তবু গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই তারা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। উত্তরাখণ্ডের টানেল বিপর্যয়ের তদন্তও তাই বিশবাঁও জলে।
অথচ পাথরের সুড়ঙ্গের মাঝে অনিশ্চিত ১৭ দিন ভয়ঙ্কর উদ্বেগ নিয়ে কাটাতে হয়েছিল নির্মাণ শ্রমিকদের। বাইরে তাঁদের সহকর্মী, উদ্ধারকারী, পরিবার সহ গোটা দেশের মানুষও প্রতিমুহূর্তের উৎকণ্ঠা সঙ্গী করে এই দিনগুলি কাটিয়েছে। সরকারি খরচে বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষজ্ঞ আনতে হয়েছে। বিপর্যয়ের পরই বেআব্রু হয়েছিল সিল্কিয়ারার টানেল নির্মাণে একাধিক দুর্নীতি ও অনিয়মের ছবি। অথচ সব ঘটনাই যেন বেমালুম ভুলে গেল কেন্দ্রীয় সরকার। ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্ত শুরু করেও অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধেই কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি।
নভেম্বরে উত্তরকাশির সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়ে বিভিন্ন রাজ্যের ৪১ জন শ্রমিককে টানা ১৭ দিন কাটাতে হয়। দেশের কোনও প্রযুক্তি যখন তাঁদের সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনতে পারেনি তখন নিষিদ্ধ ব়্যাট হোল মাইনিং (rat hole mining) পদ্ধতিতে তাঁদের বের করে আনেন শ্রমিকদের একটি দল। আর তারপরই প্রকাশ্যে আসে সুড়ঙ্গ তৈরিতে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা আদতে কোনও এসকেপ রুট না রেখেই প্রায় পাঁচ কিমি লম্বা সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ করছিল। গোটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ঘটা করে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে কেন্দ্রের সড়ক পরিবহন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেমন চলছিল সেই তদন্ত তা সামনে এল একটি আরটিআই-এর উত্তরের মধ্যে দিয়ে।
অমরাবতীর অজয় বোস নামে এক ব্যক্তির করা আরটিআই-এর জবাব দেয় ন্যাশানাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (NHIDCL)। সেই উত্তরে কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার কর্ণেল প্রদীপ পাতিল স্পষ্ট জানিয়েছেন সুড়ঙ্গ তৈরিতে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের (Navayuga Engineering Company Limited) বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি। যেখানে শুধু সিল্কিয়ারা নয়, নাগপুর-মুম্বাই সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজেও নিযুক্ত ছিল এই নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং। আর সেখানে মাত্র তিনমাস আগেই ২০ শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয়। এই তথ্য সামনে আসার পরও ঠিকাদারি সংস্থার বিরুদ্ধে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা কেন্দ্র সরকারও নিজেদের শ্রমিক দরদি বলেই দাবি করে।