জীবনের নানা ওঠাপড়া, প্রবল ব্যস্ততা থেকে জেলের একাকীত্ব-নিজের অভিজ্ঞতার এই প্রবল বৈপরীত্যকে দু-মলাটে বন্দি করেছেন সাহিত্যিক-সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। ‘পথের বাঁকে এসে’-বইটি প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) লড়াই, তাঁর প্রত্যাবর্তন আর সদার্থক মানসিকতাকে কুর্নিশ জানালেন মন্ত্রী থেকে সাহিত্যিক, সাংবাদিক থেকে প্রকাশক সবাই।
‘পথের বাঁকে এসে’-এটি কুণাল ঘোষের ৪১তম বই। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটে টাকি হাউজ বয়েজ স্কুলের অডিটোরিয়ামে বই প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়। এই স্কুলেরই প্রাক্তনী কুণাল। সারা ভারতের এখনও পর্যন্ত তিনিই একমাত্র সাংসদ যিনি নিজে যে স্কুলে পড়েছেন, সেই স্কুলকে সাংসদ তহবিল থেকে এক কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সেই অনুদানেই গড়ে উঠেছে অডিটরিয়াম। আর সেখানেই এদিনের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu), নারী-শিশু কল্যাণ ও শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা (Shashi Panja), সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘সাংবাদ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস, টাকি হাউজ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার স্বাগতা বসাক, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সমিত রায়, সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা, প্রদীপ শীল, তৃণমূল (TMC) কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী, অয়ন চক্রবর্তী। দর্শকাসনেও ছিলেন বিশিষ্টজনেরা।
বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলতে উঠে প্রথমেই প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, নিজের এমপি ল্যাডের টাকা থেকে দফায় দফায় টাকি হাউজ স্কুলকে সর্বোচ্চ অনুদান দিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। যিনি স্কুলের সবার কাছে এখনও ‘কুণাল দা’- কাছের মানুষ, যাঁকে ভরসা করা যায়।
এরপরে বিভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায় উঠে আসে বিদেশি সাহিত্যিক থেকে বাংলার বিশিষ্ট সাংবাদিক-সাহিত্যিকের নাম। মনে করিয়ে দেন, কীভাবে সাংবাদিক কুণাল ঘোষকে (Kunal Ghosh) বলা মানস ভুঁইয়ার রানি শিরমণি সম্পর্কিত নোট ১৭ বছর পরে কুণালকে ‘রানি সাহেবা’ লেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। একের পর এক সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের উদাহরণ দিয়ে ব্রাত্য বসু বলেন, সাহিত্যের মধ্যে সাংবাদিকির তথ্য আর সাংবাদিকতায় সাহিত্যিকের মনন কীভাবে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। কুণালের কাম ব্যাক শিক্ষনীয় বলে মত শিক্ষামন্ত্রীর।
সৃঞ্জয় বসুর কথায়, অনেকেই লড়াই করেছেন। কিন্তু ‘কুণালদার’ থেকে কীভাবে লড়াই করে ফিরে আসা যায় সেটা শিখতে হয়।
বইটির প্রকাশক পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এই লেখাটা চলবে। এটা একটা অংশ প্রকাশিত হল। আরও অংশ বেরোবে। এই বই পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে তাঁর চোখ ভিজে গিয়েছে বলেও জানালেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।
সাংবাদিক হিসেবে কাকে ভয় পান! অকপট জানালেন অনিন্দ্য জানা। বইটি তাঁকেই উৎসর্গ করেছেন কুণাল। বন্ধুর বই প্রকাশে এসে অনিন্দ্যর মত, “কুণাল কলকাতার রাজনীতিতে ‘দাদা’। তাঁর প্রত্যাবর্তন দেখে আমি শিখি।”
বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত জানালেন, বিষয়বৈচিত্র ও লেখার টানেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত পথের বাঁকের সব লেখা পড়েছেন তিনি।
সাংবাদিক কুণাল ঘোষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে নস্টালজিক মন্ত্রী শশী পাঁজা। প্রয়াত রাজনীতিবিদ অজিত পাঁজার পুত্রবধূ বলেন, “আমার শ্বশুরমশাই একবার বলেছিলেন, কুণাল তুমি কলম চালাও না তলোয়ার!” যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন কুণাল তাতে কাম ব্যাক করা খুব কঠিন। কিন্তু তিনি যেভাবে লড়াই করেছেন সেটা একটা আলাদা অধ্যায়।
অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির আচার্য সমিত রায় বলেন, যে কেউ সমস্যায় পড়লে সব সময় পাশে থাকেন কুণাল ঘোষ।
বক্তাদের বলার মধ্যেই উঠে মাইক হাতে নেন কুণাল ঘোষ। জানান, তাঁর খারাপ সময়ে যে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ তাঁর পাশে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সমিত রায়। ছিলেন আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী, অভিজিৎ ঘোষ-সহ হাতেগোনা কয়েকজন। প্রত্যেক বক্তারই প্রশ্ন ছিল, এত শক্তি পান কোত্থেকে কুণাল? কোথা থেকেই বা পান কাজ করার এত সময়? সাহিত্যিক-সাংবাদিক জানালেন, রোজ বেশ কিছু তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁদের থেকেই জীবনীশক্তি পান। তাঁর কাছে সমস্যা নিয়ে ছুটে আসেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। তিনি যে সবার আস্থাভাজন সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লন্ডনে কাটানো অত্যন্ত সরস মুহূর্তের কথা এদিন উল্লেখ করেন কুণাল ঘোষ। তাঁর কথা শুনে যখন অডিটরিয়াম হাসিতে ফেটে পড়ছে, তখনই তিনি মাইক তুলে দেন সাংবাদিক-সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।
রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কুণালের মধ্যে কোনও নেগেটিভ নেই। সবেতেই হ্যাঁ। বলেন, আমি কুণালের সব লেখা পড়ি। চা-চক্রে শেষ হয় অনুষ্ঠান।