কাজে ফাঁকি দিলে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। হবে মোটা টাকা জরিমানা। কেন্দ্রের হারে মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের একাংশ আন্দোলন করে চলেছেন। সেই আন্দোলনের জেরে অফিসে তাঁদের নামমাত্র উপস্থিতি। কার্যত কোনও কাজই তাঁরা করছেন না। আন্দোলনের কথা বলে তাঁরা আদতে কাজে ফাঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ গিয়েছে। এবার এই সব কর্মচারীদের ক্ষেত্রেই কড়া পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার (State Government)। আর এই ক্ষেত্রেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাজে ফাঁকি দিলে এবার আর্থিক ভাবে জরিমানা করা হবে। সেই জরিমানার পরিমাণ হবে ১০ হাজার টাকা।
বাম জমানায় রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের একাংশের মনোভাব ছিল ‘আসি যাই, মাইনে পাই’। কাজ করার মানসিকতাটাই ছিল না। এই ছবিটা বদলাতেই কড়া পদক্ষেপ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৩ সালে জনপরিষেবা আইনের মাধ্যমে রাজ্যের সব দফতরে কাজের জন্য আসা সাধারণ মানুষের হয়রানি ঠেকাতে নিয়ম করেন যে কর্মক্ষেত্রে কোনও কর্মীর গাফিলতি ধরা পড়লে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এখন সেই আইনকেই আরও কড়া করে জরিমানার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এর জন্য বর্তমান জন-পরিষেবা অধিকার আইনে একাধিক বদল বা সংশোধনী আনার তোড়জোড় শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন।
চলতি আইন অনুযায়ী, কোনও সরকারি দফতর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা না দিতে পারলে তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানে সুরাহা না পেলে জানাতে হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। সেক্ষেত্রেও কোনও সমাধান না মিললে আরও উপর মহলে অভিযোগের সুযোগ রয়েছে। সুদীর্ঘ এই প্রক্রিয়াতেই বদল আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য (State Government)। সূত্রের খবর, ভুক্তভোগী নাগরিক প্রথমবার অভিযোগ জানিয়ে সুরাহা না পেলে যাতে সরাসরি জন-পরিষেবা অধিকার কমিশনে অভিযোগ জানাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রথমবার অভিযোগ জানিয়ে সমাধান না হলে এবার সরাসরি কমিশনই হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
আগে এই কমিশন কেবল উপদেষ্টা বা নজরদার হিসেবে কাজ করত। প্রস্তাবিত আইনে তাদের প্রশাসনিক ও আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার সংস্থানও থাকছে। অর্থাৎ, দ্বিতীয়বার আবেদন করতে হলে কোনও সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিক নয়, অভিযোগ জানানো যাবে সরাসরি কমিশনেই। তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এর জন্য কমিশন নতুন করে আইনি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে চলেছে বলে খবর। সরকারের যেসব দফতরের সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বার্থ সরাসরি জড়িত, জন-পরিষেবা অধিকার আইনে সেগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম -মৃত্যুর শংসাপত্র, জমির মিউটেশন ইত্যাদি পরিষেবা এই আইনের আওতাধীন। আধিকারিক ও কর্মীরা এসব পরিষেবা দিতে সর্বোচ্চ কতদিন সময় নিতে পারেন, সেই হিসেব চাওয়া হয় দফতরগুলি থেকে। সেই তথ্য সামনে রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দফতরগুলি। এই আইনের আওতায় রয়েছে রাজ্যের সব পুরসভা এবং পঞ্চায়েত দফতরের আওতাধীন সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতও। আইন যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্যই গড়া হয়েছিল জন- পরিষেবা অধিকার কমিশন। তাদের হাতে আরও বাড়তি ক্ষমতা দিয়ে সরকারি কাজে গতি আনতে তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার।