এ যেন দুদশক আগের বাংলা সিনেমা র চিত্রনাট্য।নদী পেরোলেই কনের বাড়ি পৌঁছে যাবেন বর। সেই মতো ধুতি-পাঞ্জাবি, টোপর পরে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কাটোয়ায় ভাগীরথীর ফেরিঘাটে পৌঁছেও যান বরবাবাজি।কিন্তু তিন ঘণ্টা পেরোলেও কনে পক্ষর দেখা মেলেনি।প্রথমে ফোন ধরে বলা হয়েছে ‘লোক যাচ্ছে’। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে বরপক্ষর। শেষ পর্যন্ত ফোন সুইচড অফ হতেই, তারা বুঝতে পারেন যে প্রতারিত হয়েছেন। হাড়কাঁপানো ঠান্ডাতেও বরের মাথায় যেন বাজ পড়ে।কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করা উচিৎ। শেষ পর্যন্ত থানায় গিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করেন তিনি।
অথচ পরিজনরা বলছেন,বিয়ের রীতি মেনে সবই করেছিলেন দু’জনে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খাওয়া থেকে শুরু করে নান্দীমুখ পর্ব। এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল।কিন্তু তাল কাটল বিয়ের সময় এগিয়ে আসতেই।বর যখন বুঝলেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন, ততক্ষণে অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বাইরে হাড়কাঁপানো ঠান্ডাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম বরের। বিয়ে করার যে এত ঝামেলা, তা কল্পনাও ছিলনা তার।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় বিয়ে করতে গিয়েছিলেন নদিয়ায় কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙা-ফরিদপুরের বাসিন্দা নয়ন ঘোষ। খোদ কনে নয়নকে জানিয়েছিলেন, কাটোয়ায় এক আত্মীয়বাড়িতে তাঁদের বিয়ে হবে। সেই মতো রবিবার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব-সহ ১৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে কাটোয়ার গোয়ালপাড়া ঘাটে পৌঁছে যান নয়ন। তাঁর অভিযোগ, সেখানে পৌঁছেই কনের বাড়িতে ফোন করা হয়। যত বারই ফোন করা হয়, তত বারই তাঁরা বলেন, ‘‘লোক যাচ্ছে।’’ এই ভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা কেটে যায়। অধৈর্য হয়ে শেষবার যখন ফোন করা হয় মেয়ের বাড়িতে, তখন দেখা যায়, সকলের ফোন বন্ধ।
নয়ন পেশায় গয়না তৈরির কারিগর। রাজস্থানের জয়পুরে সোনার গয়না তৈরির কাজ করেন। তিনি জানান, মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরের বাসিন্দা সোমনাথ ঘোষ তাঁর সহকর্মী। তাঁর মাধ্যমেই বর্ধমানের দত্তপাড়া এলাকার ওই তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকে রীতিমতো প্রেম। বর্ধমান স্টেশনে মাঝেমধ্যেই দেখাও করতেন দু’জনে।স্বভাবিকভাবেই সেই তরুণীর কথা বিশ্বাস করেছিলেন নয়ন। রবিবার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু এই ভাবে প্রতারিত হতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারছেন না তিনি। কেন এমন করলেন ওই তরুণী, তা এখনও নয়নের কাছে স্পষ্ট নয়। কাটোয়া থানার আইসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দ্রুত আসল কারণ খুঁজে বের করা হবে।