গণতন্ত্রের কালোদিন! বেনজির ইতিহাস ভারতীয় সংসদে। একদিনে দুই কক্ষ মিলিয়ে বিরোধীদলের ৭৮ জন সাংসদ সাসপেন্ড। তাঁদের ‘অপরাধ’ তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা চেয়েছিলেন। একই ইস্যুতে তিনদিন আগে ১৪ জন বিরোধীদলের সাংসদকে রাজ্যসভা (Rajyasabha) ও লোকসভা (Loksabha) থেকে সাসপেন্ড করা হয়। এই নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনে মোট ৯২ বিরোধী দলের সাংসদ সাসপেন্ড (Suspend) হলেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সংসদের সিঁড়িতে ধর্না-অবস্থান করবেন বিরোধী সাংসদরা। কেন্দ্রের এই প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রতিবাদে সরব বিরোধীরা।
সংসদে ‘রংবোমা’ হানার ঘটনায় সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন। অন্য সব আলোচনা, বিল পাশ বাদ দিয়ে সংসদে হানার বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দাবি করেন তৃণমূল (TMC)-সহ বিরোধীদলের সাংসদরা। কিন্তু সেই বিষয়ে মোটেই কর্ণপাত করেননি লোকসভার অধ্যক্ষ বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান কেউই। উল্টে বিরোধীদলের সাংসদেরই গোলমাল করার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়। প্রায় বিরোধীশূন্য অধিবেশনে নিজেদের মর্জি মতো বিল পাশ করাতে চায় কেন্দ্রের শাসকদল।
সংসদে দুই কক্ষে প্রতিবাদের জেরে এদিন সাসপেন্ড হন মোট ৭৮ জন বিরোধী সাংসদ। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের রয়েছেন ১৬ জন সাংসদ। এই ঘটনা দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শুধুমাত্র বিরোধীদের দেওয়ার মতো জবাব নেই বলে বিজেপির নির্দেশে লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হল একলপ্তে একদিনে ৭৮ জন সাংসদকে। তবুও সংসদে হামলার ঘটনায় বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার গ্রেফতার-সহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি থেকে একচুলও সরেননি বিরোধী সাংসদরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সংসদের সিঁড়িতে ধর্না-অবস্থান করবেন বিরোধী সাংসদরা। এই ইস্যুতে বিজেপিকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে একদিনে এত সাংসদের বহিষ্কার। আসলে মোদি সরকার বিরোধীদের তথা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। অগণতান্ত্রিক এই সরকারের তুঘলকি আচরণের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে ফ্লোরে ও বাইরে একযোগে এককাট্টা হয়ে লড়াই করছেন ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব।
এদিন রাজ্যসভা থেকে তৃণমূলের (TMC) সাসপেন্ড হওয়া সাংসদরা হলেন— সুখেন্দুশেখর রায়, শান্তনু সেন, নাদিমুল হক, আবিররঞ্জন বিশ্বাস, মৌসম বেনজির নুর ও সামিরুল ইসলাম। লোকসভা থেকে তৃণমূলের যে সাংসদদের সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁরা হলেন— সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, প্রতিমা মণ্ডল, সমীর মণ্ডল, অসিত মাল, অপরূপা পোদ্দার। আশ্চর্যের বিষয় হল, তৃণমূল সাংসদ নাদিমুল হক সোমবার রাজ্যসভায় উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়! এ ছাড়াও কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী-সহ একঝাঁক বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
তিনদিন আগেই সংসদ একই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়েছিল। তখন ১৪ জন বিরোধী সাংসদকে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। ফলে মোট সংখ্যা মিলিয়ে ৯২ জন বিরোঘী সাংসদকে শীতকালীন অধিবেশনে সাসপেন্ড করা হল।