জয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ রেল ব্যবস্থার মধ্যে জ্বলজ্বল করছে ভারতীয় রেলের (Indian Railways) নাম। নিত্যদিন হাজার হাজার যাত্রী এই পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে পৌঁছে যান। পরিবারকে নিয়ে আনন্দে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হোক বা প্রয়োজনীয় ডাক্তার কিংবা হাসপাতালে ছুটতে হলেও রেলের উপর আস্থা রাখেন সাধারণ মানুষ। অথচ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রত্যেকটা মুহূর্তে ছেলেখেলা করছে রেল। সারা বছরে রেল পরিষেবার অব্যবস্থার তালিকা প্রকাশ পেলে লজ্জায় মুখ ঢাকতে হবে অশ্বিনী বৈষ্ণবকে (Aswini Vaishnav)। কিন্তু কোথায় তিনি? কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ভারতীয় রেলের (Indian Railways) গাফিলতির আরও এক ভয়ংকর ছবি ধরা পরল শুক্রবার রাতে। হাওড়া মুম্বই মেলের (Howrah- Mumbai) কাপলিং খুলে দু’টি কামরা নিয়েই গন্তব্যের দিকে রওনা দিল রেলগাড়ি। বাকি কামরা পড়ে রইল হাওড়া-খড়্গপুর শাখার বীরশিবপুর স্টেশনেই। এই দুর্ঘটনার ফলে রাত ৯টা থেকে হাওড়া-খড়্গপুর শাখার আপ লাইনে ট্রেন হয়ে যায়। চালকের হুঁশ ফেরে বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে যাত্রীরা কনকনে ঠান্ডায় রেল ট্রাকের উপর নিজেদের লাগেজ নামিয়ে বসে পড়েছেন আর হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে আছেন সাহায্যের আশায়। এটাই মোদি সরকার (Modi Government) পরিচালিত ভারতীয় রেলের (Indian Railways ) আসল ছবি। সারা বছর লোকাল ট্রেনের বিভ্রাট থেকে শুরু করে করমণ্ডল দুর্ঘটনার ভয়ংকর স্মৃতি প্রতি সেকেন্ডে তাড়া করে বেড়াচ্ছে রেল যাত্রীদের। এটাই ‘আচ্ছে দিন’- এর নমুনা?
ভারতবর্ষের অন্যতম বড় গণপরিবহন ব্যবস্থার হতশ্রী দশায় বিতশ্রদ্ধ সাধারণ মানুষ। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার আগে গাড়ির গতিবিধি নিয়ে বিশেষ চিন্তা থাকে সাধারণ মানুষের। সারাবছর রেলের ট্র্যাকে হয় মেন্টেনেন্স কিংবা সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি সরানোর কাজ চলছে। কিন্তু রেজাল্ট অশ্বডিম্ব। তার সঙ্গে জুড়েছে দুর্ঘটনার লম্বা তালিকা। আজ হাওড়া স্টেশনে গাড়ি লেট, কাল রেলগাড়ির কামরা একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে অথবা অগ্নিকাণ্ড, পরশু আবার দেখা যাচ্ছে বড় দুর্ঘটনার খবর ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়ে শিরোনামে উঠে আসছে। এটাই কি কেন্দ্রীয় সরকারের (Government of India) নিরাপত্তা দেওয়ার নমুনা?
কখনও রাতের ট্রেনে মহিলা কম্পার্টমেন্টে মদ্যপ অবস্থায় কুরুচিপূর্ণ ঘটনার খবর, কখনও আবার রেলের টিকিট পরীক্ষকদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। একদিকে বেসরকারিকরণের ভাবনা, অন্যদিকে সেমি হাই স্পিড ট্রেন চালু করার নামে লক্ষ লক্ষ টাকার নয় ছয় করার যে ট্রেন্ড বিজেপি সরকার (BJP Government) তৈরি করেছে তাতেই ভারতীয় রেলের পতনের পথ চওড়া হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বন্দেভারতের (Vande Bharat Express)মতো ট্রেন চালু করার পর থেকে একের পরের দুর্ঘটনার খবর এসেছে। করমণ্ডল দুর্ঘটনা (Coromandel Express) সারা দেশকে এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছিল। অথচ নামমাত্র ‘তদন্ত’ আর কয়েকজন নিচু তোলার কর্মীকে সাসপেন্ড করে দায় সেরেছে ভারতীয় রেলের কর্তারা। ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন স্টেশনে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে, যার ফলে প্রত্যেকদিন হয়রানির শিকার যাত্রীরা। দিন দুই আগেই বর্ধমান স্টেশনে জলের ট্যাংক ভেঙে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতি সপ্তাহে কাজের দিনে ব্যাহত হচ্ছে মেট্রো পরিষেবা। যাত্রীদের সুরক্ষা যে রেলের কাছে একেবারে গুরুত্বহীন তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
শুধুমাত্র এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা, আর প্রতিশ্রুতির নামে ভাঁওতাবাজি বিজেপি সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলে একাংশ। তবে প্রশ্ন একটাই, রেলযাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কার? উত্তর কি দেবেন ‘মাননীয়’ রেলমন্ত্রী?