খুদেদের চোখে ছিল একরাশ স্বপ্ন। সবাই চেয়েছিল ভাল ফুটবলার হয়ে উঠতে। তাই বেঙ্গালুরুর একটি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবে, এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল খুদের দল।এদের গড় বয়স আট থেকে ১৪। কিন্তু কখনও ভাবেনি ফুটবলের বদলে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বাসন, ন্যাতা-বালতি, ঝাঁটা, ময়লা জামাকাপড়। যদিও বাস্তবে ঘটেছিল সেটাই। বলা যেতে পারে বাংলার ১০ খুদে ফুটবলারকে কার্যত শিশু শ্রমিকে পরিণত করা হয়েছিল।
বেঙ্গালুরুর ওই ফুটবল অ্যাকাডেমিতে কী করতে হয়নি তাদের? ফুটবল খেলার বদলে কেউ আনাজ কেটেছে, কেউ বাসন ধোয়ার কাজ করেছে, কেউ ঘর পরিষ্কার করেছে।অভিযোগ, বাথরুম পরিষ্কার করার কাজও করানো হয়েছে খুদে ফুটবলারদের দিয়ে।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক সপ্তাহ আগে।চার মাসের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল তারা। এক মাসের মধ্যেই তাদের ভাল ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্ন উধাও হয়ে যায়। কারণ, ততদিনে তারা ওই অ্যআকাডেমির শিশু শ্রমিকে পরিণত হয়েছিল। কর্নাটকের যুব লিগে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ১০ ফুটবলারকে। সে সব যে শুধুই মন রাখার কথা, তা এক মাসেই বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাদের। শুধু নিজেদের রান্না, জামাকাপড় কাচা, ঘর পরিষ্কার, বাসন ধোয়া বা অন্য কাজ করতে হয়নি। অ্যাকাডেমির কোচ, কর্তা এবং অন্যদের সব কাজও করানো হয়েছে তাদের দিয়ে।
বেশ কয়েক দিন এমন চলার পর নিজেদের বাড়িতে ফোন করার সুযোগ পায় এক খুদে ফুটবলার। তারা জানায়, অত্যন্ত নিম্ন মানের খাবার দেওয়ার কথা। ঠিক মতো কাজ না করলে মারধর করার কথা। তাদেরই বক্তব্য, খেলার বদলে দিনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন কাজ করেই কাটত তাদের।অভিযোগ, রান্না, জামাকাপড় কাচা বা ঘর পরিষ্কারের পাশাপাশি বাথরুমও পরিষ্কার করতে হয়েছে তাদের। এমনকী, বাড়ি ফিরতে চাইলে প্রত্যেকের কাছে ২০ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়েছিল।বেগড়বাই করলেই মারধর করা হয়েছে। এতটাই নিম্নমানের এবং কম খাবার দেওয়া হতো যে তাতে পেটও ভরত না।
যে সংস্থা ১০ জনকে ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য বেঙ্গালুরুর ওই অ্যাকাডেমিতে পাঠিয়েছিল, তারা ফবর পাওয়া মাত্র কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হয়। ১০ খুদে ফুটবলারকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয় রাজ্যের ফুটবল সংস্থা আইএফএ। সচিব অনির্বাণ দত্ত এবং সহ-সভাপতি সৌরভ পাল সব কিছু তদারকি করেছেন।শেষপর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পেরেছে তারা।
বাড়ি ফিরে এলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না শুভদীপ, ইশানদের। সোনারপুরের একটি অ্যাকাডেমির ওই শিক্ষার্থীরা ফের নিজেদের অ্যাকাডেমিতেই অনুশীলন শুরু করেছে। অ্যাকাডেমির সভাপতি তন্ময় বোস জানিয়েছেন, আমরা খবর পাওয়ার পরেই কলকাতা পুলিশ, আইএফএ-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলাম। সকলেই অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে আমাদের সাহায্য করেছেন।ওর াদ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। আমরা ভাবতেই পারছি না, খুদে ফুটবলারদের রাতারাতি শিশু শ্রমিক বানিয়ে দিয়েছিল ওরা। এর জন্য ওই অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।