বুধবার লোকসভা অধিবেশন চলাকালীন তাণ্ডব দুই যুবকের। সংসদ ভবনের বাইরেও তাণ্ডব আরও দু’জনের। স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি সংসদের ভিতরে-বাইরে ছোড়া হল হলুদ রংয়ের গ্যাস। এই ঘটনায় সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই তাণ্ডবকারীদের পাস ইস্যু করা বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন বিরোধী শিবির।
এই ঘটনার পরই সরব হয়েছে তৃণমূলও। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সংসদভবনের প্রবেশপত্র উদ্ধার হলে দেখা যায়, মহীশূরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপের দফতর থেকে সেটি ইস্যু হয়েছিল। তাতই রাজনৈতিক পারদ চড়তে শুরু করেছে। তৃণমূলের প্রশ্ন, সংসদের প্রশ্নোত্তরের ওয়েবসাইডের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড অন্যকে দেওয়ায় যদি মহুয়াকে বহিষ্কার করা হয়, তাহলে এক্ষেত্রে প্রতাপের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নয়?
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বাংলার নারী এবং শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, “নিরাপত্তার বলয় ভেদ করে কী করে ভিতরে ঢুকলেন ওঁরা? বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা ওই পাস দিয়েছিলেন, যাতে ওরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারে, গ্যালারিতে বসে যাতে দেখতে পারে। তাহলে আজ বিজেপি বলুক, ওনাকে কেন বহিষ্কার করা হবে না? এখানে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। লোকসভার ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সাংসদকে বহিষ্কার করছে কিনা, বলতে হবে বিজেপি-কে।”
শশীর সংযোজন, “তৃণমূল সাংসদকে (মহুয়া মৈত্র) বহিষ্কার করতেও এই যুক্তি সাজানো হয়েছিল। তৃণমূল সাংসদ বলে তাঁকে বহিষ্কার করা হল। আর এ তো এত বড় ঘটনা, এত সাংঘাতিক ঘটনা! কেন্দ্রকে জবাব দিতে হবে, বিবেচনা করতে হবে লোকসভাকেও। এই ধরনের কাজের জন্য, এমন মানুষকে পাস দেওয়ার জন্য, যাঁরা কিনা সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে? প্রশ্নের উত্তর পাওয়া দরকার। মহুয়া মৈত্রের ক্ষেত্রে লোকসভা এত তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নিল এবার দেখতে চাই এই ক্ষেত্রে লোকসভা কি ব্যবস্থা নেয়। যদি বিজেপি এই সাংসদ কে বহিষ্কার করে তাহলে বুঝবো বিজেপি নিরপেক্ষ। ২০০১ সালে ওই ঘটনা ঘটেছিল তার পরেও কেন নিরাপত্তা কঠোর হলো না?”
একই সুরে কথা বলেন রাজ্যের আরেক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনিও প্রশ্ন তোলেন, সংসদের নিরাপত্তা ইস্যুতে যদি মহুয়া মৈত্রের ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার ক্ষেত্রে নয় কেন? অধ্যক্ষ ঠিক করুন, নিরাপত্তার ইস্যুতে লোকসভার ভবিষ্যত কী হবে।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, এটা এটা কি নিছকই কাকতালির ঘটনা? সাংসদদের প্রাণ বিপন্ন হতে পারত। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষতি হতে পারতো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কী করছে? এতে দেশের কি নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটে না? নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না? আশা করি এর উত্তর পাবো আমরা।
অন্যদিকে, রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন বলেন, “আমাদের লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে সিকিউরিটি ইস্যুতে বহিষ্কার করা হয়। তিনি তার লগইন পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করেছেন এই অভিযোগে তাকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করে মোদি সরকার। আমাদের প্রশ্ন, আজকে তার থেকেও মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। লোকসভা চলাকালীন, অতগুলো সাংসদ উপস্থিত থাকাকালীন দর্শকাসন থেকে দুজন ঝাঁপ দিয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এরকম ঘটনা সংসদে ঘটেনি। কোথায় লোকসভার নিরাপত্তা? এতবড় একটা ঘটনা ঘটলো সংসদ চলাকালীন। মোদি সরকার যখন নিরাপত্তা নিয়ে এত চিন্তিত তাহলে এটা কি নিরাপত্তার ইস্যু নয়? লগইন পাসওয়ার্ড শেয়ার করার জন্য যদি মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার করা হয় তাহলে এত বড় নিরাপত্তার গাফিলতি যার কারণে ঘটল সেই বিজেপি সাংসদকে কেন এখনই ঘাড় ধরে বের করে দিচ্ছে না। মোদি সরকার যখন নিরাপত্তা নিয়ে এত চিন্তিত তাহলে তো আগে ওই বিজেপি সাংসদকে বের করে দেওয়া উচিত। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আমাদের প্রশ্ন, এবার মোদি সরকারের সিদ্ধান্ত কী করবে তারা!”
আরও পড়ুন:মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই সতর্ক নবান্ন, জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে বিশেষ বৈঠক মুখ্যসচিবের