পরিবেশবিদদের সতর্কবার্তায় কর্ণপাত না করে মোদি সরকারের বহুল প্রচারিত চারধাম প্রকল্পের অংশ হিসাবে চরম ভূমিধসপ্রবণ উত্তরাখণ্ডে দীর্ঘ সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই সিল্কিয়ারা টানেল অনুমোদিত হয়। সেখানে সাম্প্রতিক বিপজ্জনক ধস এবং ১৭ দিন ধরে ৪১ জন শ্রমিক আটকে থাকার ঘটনার পর ফের অনিশ্চয়তার মুখে মোদির চারধাম প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। সিল্কিয়ারা টানেল ধসের ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে চারধাম প্রকল্প নিয়ে ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে কীভাবে পরিবেশ সংক্রান্ত সতর্কতা অমান্য করেছে প্রশাসন। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৫ বছরে সিল্কিয়ারা টানেল নির্মাণের সময় প্রায় ২০টি ধসের ঘটনা ঘটলেও নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের চারধাম প্রকল্পের কাজ থেমে থাকেনি। বরং সতর্কতাগুলিকে উপেক্ষা করে যেভাবে তথাকথিত উন্নয়নের মোড়কে কাজ চলছে তাতে সিল্কিয়ারার মতো পরিণতি অবধারিতই ছিল। বর্তমানে সিল্কিয়ারা টানেলের প্রধান উদ্বেগের কারণ এর প্রস্থের মাপ। এটি চারধাম প্রকল্পের অংশ হলেও পরিবেশবিদদের দাবি, তা সঠিক প্রক্রিয়া না মেনে তৈরি হয়েছে। ন্যাশনাল হাইওয়েজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)-এর ডিরেক্টর অংশুমনীশ খালখো স্বীকার করে নেন, প্রতিটি টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সময় একবার করে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। চারধাম প্রকল্পের একাধিক পর্যায় নির্মাণের সময় প্রায় ২০টি ছোট থেকে মাঝারি স্তরের ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার কর্মরত শ্রমিকরা আটকে পড়ায় আমরা চিন্তিত ছিলাম।
এদিকে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য কোনও ‘পরিবেশ মূল্যায়ন’ না করার বিষয়টি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গিয়েছে, বার্নার্ড গ্রুপ নামে ইউরোপীয় কোম্পানি যারা নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিংকে ডিজাইন করে দিয়েছিল এই টানেলের জন্য, তাদের অভিমতও গুরুত্বপূর্ণ। সেই সংস্থার বক্তব্য, কাগজে কলমে টানেলের যে ‘ভূতাত্ত্বিক অবস্থা’ বলা হচ্ছে প্রকৃত অবস্থা তার থেকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। অর্থাৎ বিপদের আশঙ্কা আগে থেকে ছিলই। কিন্তু পরিবেশবিধি অবজ্ঞা করে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিপদের মধ্যে ঠেলেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির স্বপ্নের চারধাম যাত্রা প্রকল্প। জানা গিয়েছে, সিল্কিয়ারা টানেল উদ্ধারকার্যে খরচ হওয়া অর্থের পরিমাণ ইতিমধ্যেই দাবি করা হয়েছে এই প্রকল্পের কাজে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার কাছ থেকে। ২০১৯-এর ৮ অগাস্ট আদালত প্রকল্পটি পর্যালোচনা করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি (এইচপিসি) গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। সেইসঙ্গে পরিবেশের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্যও সতর্ক করে। যদিও ততদিনে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যায়।
পরিবেশবিজ্ঞানী রবি চোপড়া এইচপিসি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন ২০২০ সালের জুলাইতে। আদালতে জমা দেওয়া কমিটির রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রকল্প চালাতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ভূমিধস এবং মৃত্যু ঘটেছে। প্রচুর গাছ নদীবক্ষে তলিয়ে যাওয়ায় পাহাড়ের ধারণক্ষমতা কমে গিয়েছে। তিনি রিপোর্টে এও উল্লেখ করেছেন, ওই কাজের সঙ্গে জড়িত ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা এই প্রকল্পের আশঙ্কার দিকগুলি এইচপিসি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেনি। অর্থাৎ বিপদের আশঙ্কা বারবার প্রকাশ করা হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি মোদি সরকার।
আরও পড়ুন- ক.বর কার? বি.বাদে কলকাতার দুই প্রবাদপ্রতিম পরিবার, মেটাতে আসরে ফিরহাদ