শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অ.পচেষ্টা! সমাজবিজ্ঞানের সিলেবাসে রামায়ণ-মহাভারত পড়াতে চায় NCERT

0
1

ফের শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অপচেষ্টা কেন্দ্রের মোদি সরকারের। রামায়ণ-মহাভারতকে (Ramayan-Mahabharat) সমাজবিজ্ঞানের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT) সংস্থার নিয়োগ করা কমিটি। বিরোধীদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ইতিহাস আর পুরাণ গুলিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।

শিক্ষায় গৈরিকীকরণের চেষ্টা অনেকদিন ধরেই করছে বিজেপি। নয়া সংসদ ভবনেও রামায়ণ-মহাভারতের মতো মহাকাব্যকে ‘ইতিহাস’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এবার স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি NCERT চাইছে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যে দেশের ইতিহাস হিসেবে রামায়ণ-মহাভারতকে (Ramayan-Mahabharat) তুলে ধরতে। কমিটির প্রধান ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক সি আই আইজাকের যুক্তি, ‘‘এর ফলে অল্প বয়স থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মসম্মান ও নিজেদের জাতির জন্য গর্ববোধ তৈরি হবে।’’ এমনকী এর ফলে ব্রেন ড্রেন বা বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। স্বাভাবিক ভাবে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

এই বিষয় নিয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার গৈরিকীকরণ করতে চাইছে মোদি সরকার। তৃণমূল (TMC) সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার (Kakoli Ghoshdastider) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘অতীতেও বিজেপি শিক্ষায় গৈরিকীকরণের চেষ্টা করেছে। মোদি সরকার তো ইতিহাসকেই পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সব পরিবর্তন আদৌ পছন্দ করে না মানুষ।’’ শিক্ষায় ধর্মকে টেনে আনার বিষয়ে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ।

জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপকের মতে, মহাকাব্য হিসেবে রামায়ণ-মহাভারত অবশ্যই ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ। কিন্তু এই মহাকাব্যগুলিকে মিথ হিসেবে ধরা হয়।  এগুলিকে সমাজবিজ্ঞানের সিলেবাসে আনলে সেটা সঠিক তথ্য হবে না। কারণ, সমাজবিজ্ঞান তথ্যনির্ভর বিষয়। মহাকাব্যে তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়। আলাদভাবে কোনও বিষয় হিসেবে এইসব মহাকাব্য পড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি।

আরও পড়ুন: আদালত অবমাননার অভিযোগ, গ্রেফতার খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা

দেশের অনেক স্কুলেই রামায়ণ-মহাভারত (Ramayan-Mahabharat) পড়ানো হয়। তবে, সেটা মহাকাব্য হিসেবেই পড়ানো হয়। কিন্তু সেটা না-পসন্দ NCERT কমিটির প্রধানের। তাঁর প্রশ্ন, মহাকাব্যকে মিথ বা পুরাণ হিসেবে কেন পড়ানো হবে? বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও সেই তালে তাল দিয়ে বলেন, রামায়ণ-মহাভারত দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা বলে। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস আমলে ইতিহাসকে কার্যত ইসলামিকরণ করা হয়েছিল। এবার না বদলানো হচ্ছে। অর্থাৎ পক্ষান্তরে ধর্মীয়করণের অভিযোগ মেনে নিয়েছেন সুকান্ত।

 

তবে, এই বিষয় নিয়ে যথন প্রবল বিতর্ক তখন সমাজবিজ্ঞানে রামায়ণ-মহাভারত পড়ানোর বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি NCERT। তা হলে আইজাক হঠাৎ এই ধুঁয়ো তুললেন কেন? বিরোধীদের মতে, সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রামমন্দিরের উদ্বোধন। সেই কারণেই হাওয়া তুলছে গেরুয়া শিবির। যদি ব্রেন ড্রেন আটকাতে হয়, তাহলে দেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। তাহলেই বিদেশে শিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রবণতা কমবে। দেশের ঐতিহ্য সম্পর্কে নবীন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনী পড়ানোর উপর জোর দেওয়া পক্ষে সওয়াল বিরোধীদের।