কৃষি হোক বা শিল্প দুই ক্ষেত্রে বাংলার শ্রমিকরা যে মজুরি পান, তথাকথিত ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলির তুলনায় তা অনেকটাই বেশি। এটা কোনও বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা নয়! নয় কোনও মনগড়া রিপোর্টও। দেশের রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া সম্প্রতি এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পক্ষেত্রে কর্মীরা যে দৈনিক ভাতা বা মজুরি পান, তথাকথিত শিল্পসমৃদ্ধ এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তার চেয়ে ঢের পিছিয়ে। কৃষিক্ষেত্রে রোজগারেও ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলা। গত কয়েক বছর ধরেই এই সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য।
আরবিআইএ-র রিপোর্ট অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিক্ষেত্রে দৈনিক গড় মজুরি ছিল ৩২৪ টাকা। শিল্পক্ষেত্রে তা ছিল ৩৩৮ টাকা। গুজরাত বা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে এই পারিশ্রমিক অনেকটাই কম। তবে পশ্চিমবঙ্গই যে এক্ষেত্রে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে, তেমন নয়। কেরল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ বা জম্মু-কাশ্মীরের মতো কয়েকটি রাজ্যে দৈনিক মজুরি বাংলার চেয়ে বেশি। কিন্তু একাধিক ডাবল ইঞ্জিন বা মহারাষ্ট্রের মতো ‘শিল্পবান্ধব’ রাজ্যে যেভাবে শ্রমিকরা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তাতে রাজ্যগুলির সাফল্যের ঢক্কানিনাদই চ্যালেঞ্জের মুখে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কোন রাজ্যে কর্মীদের মজুরি কত হবে, তা মূলত নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট শিল্পসংস্থা বা কর্মদাতা সংস্থার ওপর। এক্ষেত্রে অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তবে বাংলায় কর্মীরা বেশি মজুরি পান বলে এমনটা ভাবার কারণ নেই যে এখানে জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এ রাজ্যের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির সূচক ছিল ৭.১। ওই বছর এই মূল্যবৃদ্ধির সূচক উত্তরপ্রদেশে ৭.১, ত্রিপুরায় ৭, মহারাষ্ট্রে ৭.৩ এবং মোদি-শাহের গুজরাতে ৬.৯ ছিল। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়, বাংলায় জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। রিজার্ভ ব্য়াঙ্কের তথ্য বলছে, গত ৫ বছর ধরে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে মজুরির নিরিখে বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে আছে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়শই দাবি করেন, এখানে শিল্পের ভিত্তি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলি। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগও বেশি। এই পরিস্থিতিতে এই সাম্প্রতিক রিপোর্ট শিল্পের বড়াই করা রাজ্যগুলির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন- নয়া অ.জুহাত! রাজ্যকে চিঠি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের, টাকা আটকানোর ছুতো কেন্দ্রের: তো.প প্রদীপের