১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট, প্যারিস শহরের এক প্রান্তে টানেলের ভেতর ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে গেল দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটিতে ততক্ষণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবতী তখন জীবনের দ্বারপ্রান্তে। ইনি আর কেউ নয় ব্রিটিশ রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানা। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকল ইউনিটের সদস্য জেভিয়ার গোরমেলন স্তম্বিত হয়ে যান ভয়াবহ সেই পরিস্থিতি চোখের সামনে দেখে। গুরুতর আহত সেই মহিলাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্স তোলার সময় তাকে কিছু কথা বলেছিলেন ব্রিটিশ রাজবধু। ডায়ানার মৃত্যুর এত বছর পর অবশেষে সে কথা প্রকাশ্যে আনলেন গোরমেলন। যদিও দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর তিনি জানতেন না কে ওই আহত মহিলা।
সম্প্রতি সেদিনের অভিজ্ঞতা এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তুলে ধরেন জেভিয়ার গোরমেলন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমি ভেবেছিলাম তিনি বেঁচে যাবেন। যত দ্রুত সম্ভব দুর্ঘটনা গ্রস্থ গাড়ি থেকে ওনাকে বের করে অক্সিজেনের পাইপ লাগাই। ওই অবস্থাতেই ওনাকে শান্ত থাকতে বলছিলাম। কিন্তু ডায়ানা বলেন, ‘ঈশ্বর, কী হলো এটা?’ এরপরই অচেতন হয়ে যান। এরপর আমি ও আমার টিম ডায়ানার জ্ঞান ফেরাতে তৎপর হই, এক পর্যায়ে কিছুটা জ্ঞান ফিরে আসে তাঁর।”
একই সঙ্গে জেভিয়ার বলেন, “আমি যতটা জানি, অ্যাম্বুলেন্সে থাকার সময়ও তিনি জীবিত ছিলেন এবং আমি তার সুস্থতা কামনা করছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি, তিনি হাসপাতালে মারা গেছেন। ওই সংবাদটা আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে ডায়ানার অ্যাম্বুলেন্সের লেগেছিল ৪১ মিনিট।” তিনি আরও বলেন, “আমি এখন জানি তার শরীরের বাইরে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও, ভেতরে ছিল। ওই সময়ের সব স্মৃতি আমার মনে আছে। তিনি যে প্রিন্সেস ডায়ানা ছিলেন তা আমি জানতাম না। যখন তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন আমার এক সহকর্মী জানান, তিনি ইংল্যান্ডের রাজবধু।”
উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের বর্তমান রাজা চার্লসের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ডায়ানা। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রাণ হারান ডায়না। অবশ্য তার মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেন অনেকেই। ১৯৮১ সালে চার্লসের সঙ্গে বাগদানের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ডায়ানা ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান নারী। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান, ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে তার আন্দোলনই বিখ্যাত করেছে তাকে। তার জীবদ্দশায় ডায়ানাকে বলা হত বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী। সমালোচকদের মতে, এই খ্যাতিই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যার পরিণতি ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ১৯৯৭ সালের গাড়ি দুর্ঘটনা। প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু আজো রহস্যের চাদরে আবৃত। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু দোদি আল-ফায়েদসহ তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে আসা কিছু তথ্য বলছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন আলোচিত এই রাজবধূ।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসের রিজ হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিন্সেস ডায়ানা, তার বন্ধু দোদি ও গাড়িচালক হেনরি পল। ধারণা করা হয়, পাপারাজ্জিদের এড়াতে দ্রুত গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনার শিকার হয় তাদের গাড়িটি। আর এ ধারণাটিই এখনো প্রতিষ্ঠিত। ডায়ানার মৃত্যুরহস্য তদন্তকারী আদালতের সামনে সাক্ষ্য দানকালে রডনি টার্নার জানান, ১৯৯৭ সালের মধ্য-আগস্টে ডায়ানার সঙ্গে এক আলাপকালে তিনি জানতে পারেন, দোদির সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানা সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এর দুই সপ্তাহ পরে মারা যান ডায়ানা ও দোদি। ২০ বছর পরও অজানা ডায়ানার মৃত্যুরহস্য। ব্রিটিশ প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয় অতিরিক্ত মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক। যার জেরেই এই দূর্ঘটনা।নির্ধারিত মাত্রার তিনগুণ বেশি মদ পান করেছিলেন সে দিন হেনরি পল। কিন্তু চারদিন পর ফরাসি পুলিশের সে বক্তব্য খারিজ করে দোদির পরিবার।