আদালতের রায়ে আইনের কোনও সমস্যা ধরা পড়লে সেটা সংশোধন করে দিতে পারে আইনসভা। কিন্তু কোনওভাবেই নয়া আইন এনে আদালতের রায় (Judgement) বদলে দেওয়া যায় না বা বাতিল করা যায় না। শনিবার একথাই স্পষ্ট জানালেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (Justice DY Chandrachud)। এদিন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় বিচারব্যবস্থা নির্বাচিত শাখা নয়। গণতন্ত্রের নির্বাচিত শাখার গুরুত্ব অনেক। আমি সেটাকে একেবারেই ছোট করছি না। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যেমন মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। তেমনই এক্সিকিউটিভ কমিটিকেও (Executive Committee) সংসদের কাছে জবাবিহি করতে হয়। আমি দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই ব্যবস্থাকে সম্মান করি। তবে এটাও অন্যদের বোঝা উচিত যে বিচারপতিদের ভূমিকা কী। আমরা নির্বাচিত নই। তবে এটা আমাদের দুর্বলতা নয়, শক্তি।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চন্দ্রচূড় বলেন, আমাদের সমাজ সংবিধান দ্বারা চালিত। আদালত সেই মূল্যবোধকে রক্ষা করে। অনেক সময়ই আমরাও সময়ের আগে চলে যাই। যেমন পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সময়ের থেকে এগিয়ে। সমলিঙ্গে বিবাহের ক্ষেত্রেও আমার রায় বর্তমান সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তিনি আরও বলেন, আমি সমলিঙ্গে বিবাহের আইনি বৈধতার পক্ষে রায় দিয়েছিলাম। তবে আমার তিনজন সহকর্মী আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। এটাই বিচার ব্যবস্থার প্রক্রিয়া এবং আমি এটাকে সম্মান করি। তিনি আরও জানান, যদি কোনও রায় নির্দিষ্ট আইনের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে দেয় এবং আইনে কোথায় ফাঁক আছে সেটা দেখিয়ে দেয়, সেই আইন সংশোধন করার জন্য উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। কিন্তু কোনও বিচারপতি যদি কোনও রায় দেন, আইন এনে সেই রায় বদলে দেওয়ার বা বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে আইনসভা এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভেদ দেখা গিয়েছে। এমন আবহেই এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে প্রশ্ন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, সংসদ নতুন আইন করতে পারে, কিন্তু রায় কখনোই বাতিল করতে পারে না। তবে এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতি এমন মন্তব্য করলেন যখন একাধিক ইস্যুতে দেশের বিচারবিভাগ এবং নির্বাচিত সরকারের মতবিরোধ প্রকট হয়েছে। এমনকী নয়া আইন এনে আদালতের রায় বাতিল করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ দিল্লির আমলা বিল। সুপ্রিম কোর্ট দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার পরই আইন এনে সেই রায় বদলে দিয়েছে কেন্দ্র।