স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অসম্মতিপত্র বা ডিসেন্ট নোট (Note Of Dissent) দিতে চলেছে তৃণমূল-সহ I.N.D.I.A জোট। শুক্রবার, বেলা ১২টায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছে সরকার পক্ষ। এই বৈঠকেই মোদি সরকারের প্রস্তাবিত ভারতীয় দন্ড সংহিতা, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এবং ভারতীয় অপরাধ সংহিতা বিল নিয়ে খসড়া রিপোর্ট পেশ ও গ্রহণ করার কথা। তবে, সে বিষয়ে তৃণমূল (TMC) -সহ আপত্তি জানিয়েছে ইন্ডিয়ার দলগুলি।
তৃণমূলের তরফে ২৭ অক্টোবর বৈঠকের দিন ধার্য করার তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে। কারণ, সেদিন কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভাল এবং শনিবার লক্ষ্মীপুজো। ইউনেস্কোর তরফে বাংলার দুর্গাপুজোকে ইতিমধ্যেই হেরিটেজের তকমা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও কেন মোদি সরকার দুর্গাপুজোর কার্নিভালের দিনেই নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সংসদীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছে- তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজলালকে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা এবং সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েন । উৎসবের মরশুমে স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকার তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে তৃণমূলের (TMC) তরফে। যদিও দলের নির্দেশে এদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূলের দুই সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, রিপোর্ট তৈরি করার আগে কমিটির সদস্যদের খসড়া পাঠাতে হয়। সেগুলি পড়ে সদস্যরা সংশোধনী জমা দেন। তারপর সেগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর রিপোর্ট গৃহীত হয়। রিপোর্টের খসড়া ভালভাবে পড়ে সংশোধনী জমা দিতে যথেষ্ঠ সময় প্রয়োজন হলেও তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোটের সাংসদদের অভিযোগ, এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি।
ভারতীয় দণ্ড সংহিতা বিলটি পাশ করাতে অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করছে কেন্দ্রীয় সরকার। রিপোর্টের খসড়া পড়ার জন্য যথেষ্ঠ সময় না দেওয়ায় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজলালকে গত ২৩ অক্টোবর তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং ২২ অক্টোবর কংগ্রেসের পি চিদম্বরম চিঠি দিয়েছেন। কমিটির বৈঠক এবং বিলটি নিয়ে তাড়াহুড়ো করার বিষয়ে বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরেছেন তাঁরা। চিঠিতে ডেরেক উল্লেখ করেছেন, “২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় খসড়া রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। ফলে তিনটি রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিবেচনা করার জন্য মাত্র ৫ দিন সময় পাওয়া যাচ্ছে। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিলের রিপোর্টের ক্ষেত্রে এই সময় যথেষ্ঠ কম। ” খসড়া রিপোর্টে বেশ কিছু ভুল চিহ্নিত করেছে ডিএমকে সাংসদ এলানগো এবং পি চিদম্বরম। অভিযোগ করা হয়েছে, বিলের খসড়া রিপোর্ট তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে পর্যাপ্ত আলোচনা করা হয়নি।
তৃণমূল সংসদীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, “বিজেপি কোনোদিন বাংলার ঐতিহ্য বোঝার চেষ্টা করেনি । দুর্গাপুজো সম্পর্কে এটা বিজেপির অসংবেদনশীলতা।”
শুক্রবারের বৈঠকে কমপক্ষে ১০টি ডিসেন্ট নোট জমা হতে চলেছে। যে বিষয়গুলিতে বিরোধীরা আপত্তি জানিয়েছেন তার মধ্যে প্রথম হল, এই তিনটি বিলের কোনও প্রয়োজনীয়তাই ছিল না। কারণ, এই তিনটি বিল আসলে IPC এবং CRPC-র ৯৫ শতাংশ ফটোকপি৷ এর পরেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সেডিশন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আপত্তি তুলে বিরোধী জোটের বক্তব্য, সরকার সেডিশন বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন বিলোপের কথা বললেও আসলে তা বিলোপ করা হচ্ছে না।
বিরোধীদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধি খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন তড়িঘড়ি এই তিনটি বিল পাসের চেষ্টা করা হচ্ছে?
স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে বিজেপির, যেখানে বিজেপির সাংসদের সংখ্যা ১৯, বিরোধী সাংসদদের সংখ্যা ১১৷ এই পরিস্থিতিতে অপরাধ নিয়ন্ত্রক তিনটি বিলকে পুরোপুরি প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না বিরোধী জোট। যদিও তাদের দেওয়া ডিসেন্ট নোট নথিবদ্ধ হয়ে থাকবে। সরকারপক্ষের তরফে আশা করা হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের পক্ষে এই বিল পাশ করা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু বিরোধীদের অসম্মতিপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এই বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় মোদি সরকার।