‘হামাসের হামলায় যুদ্ধের দামামা ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনে, চিনুন এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে

0
1

ইজরায়েলের মাটিতে হামাস জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১১০০ জনের বেশি ইজরায়েলি। গাজা ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলি দখল থাকা এলাকা লক্ষ্য করে অন্তত ৫০০০ রকেট ছোড়ার পাশাপাশি, স্থলপথে, জলপথে, আকাশপথে সমান্তরাল হামলা চালিয়েছে হামাস। ভয়াবহ এই হামলায় কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। ইজরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কে এই হামাস? ইজরায়েল সহ বিশ্বের একাধিক দেশ এদের জঙ্গি গোষ্ঠীর তকমা দিলেও প্যালেস্টাইনের মানুষের কাছে এই সংগঠন তাঁদের মুক্তিদাতা। আসুন চিনে নেওয়া যাক এই হামাসকে।

হামাস গোষ্ঠী ও তাদের লক্ষ্য

প্যালেস্টাইনের একটি উগ্রপন্থী সংগঠন এই হামাস। ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ডের শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে রয়েছে। ১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে যে প্যালেস্টাইনি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন থেকেই জন্ম নিয়েছিল হামাস গোষ্ঠী। ১৯৮৭ সালে আহমেদ ইয়াসিন এবং আবদেল আজিজ আল-রান্টিসি, মিশরীয় সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর শাখা হিসেবে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০০৭-এ, ৩৮ বছর পর গাজা ভূখণ্ড থেকে মিশরের দখলদারি উঠে যাওয়ার পর, সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল হামাস। তারা সরকার গঠন করলেও, হিংসার পথ ছাড়বে না বলে জানিয়েছিল। ইজরায়েল রাষ্ট্রকেও স্বীকৃতি দেয়নি তারা। গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য হল প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা এবং ইসরায়েল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য ইজরায়েল রাষ্ট্রের ধ্বংস চায় হামাস।

হামাস বনাম ফাতাহ

তবে একদিনে যখন প্যালেস্টাইনের উগ্রপন্থী সংগঠন হামাস, অন্যদিকে প্যালেস্টাইনে রয়েছে এক নরমপন্থী সংগঠন ফাতাহ। স্বাভাবিকভাবেই এই দুই সংগঠন পরস্পরের বিরোধী। যদিও দুই গোষ্ঠীই প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা চায়। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে একটি আধাসামরিক সংগঠন হিসেবে ফাতাহ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরাফত। পরে অবশ্য সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ ছেড়ে দিয়েছিল গোষ্ঠীটি। ইজরায়েলের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুসারে একটি সমান্তরাল প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা সমর্থন করেছিল ফাতাহ। ২০০৪ সালে আরাফতের মৃত্যুর ফলে, প্যালেস্টাইনি রাজনীতিতে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। আর তারই সুযোগে শক্তি বাড়িয়েছিল হামাস। ২০০৭ সালে, ফাতাহ-র সঙ্গে গৃহযুদ্ধের পর হামাস গোষ্ঠী গাজা ভূখণ্ডের দখল নিয়েছিল। তারপর থেকে, গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে হামাসের দখলে, আর ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ক্ষমতা ধরে রেখেছে ফাতাহ। দুই গোষ্ঠীর আরও কিছু পার্থক্য রয়েছে। হামাস খোলাখুলি নিজেদের ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচয় দেয়। ফাতাহ কিন্তু, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে। হামাস ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের আহ্বান জানায়। অন্যদিকে ফাতাহ, ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজায় আগ্রহী। বর্তমানে ফাতাহ গোষ্ঠীর প্রধান মাহমুদ আব্বাসই প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট।

ইজরায়েলে সাম্প্রতিক হামলার পিছনে হামাসের যুক্তি

এক বিবৃতিতে, হামাসের সামরিক কমান্ডার মহম্মদ দেইফ জানিয়েছেন, আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করতেই ইজরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা শুরু করা হয়েছে। মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র মসজিদ এই আল আকসা। কিছু দিন আগেই এই মসজিদে হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলি দখলদাররা। বস্তুত, বরাবরই প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছে এই আল আকসা মসজিদ। ইজরায়েলিদের দাবি, ইহুদিদের পবিত্র মন্দির ধ্বংস করেই এই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল। শনিবারের হামলার পর, হামাস কমান্ডার দেইফ জানিয়েছেন, জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদকে অপবিত্র করেছে ইজরায়লি দখলদাররা। তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

হামাসের পক্ষে কারা, বিপক্ষে কারা?

ইজরায়েল ও হামাসের এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দুই দেশের পক্ষ ও বিপক্ষে দাড়িয়েছে একাধিক দেশ। হামাস গোষ্ঠীকে প্রথম থেকেই সমর্থন করে ইরান, সিরিয়া এবং ইয়েমেন। ইরান, সিরিয়া এবং লেবাননের ইসলামী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও বিভিন্ন ক্ষেত্রে হামাসকে সমর্থন করে। শনিবারের হামলার পরও, হামাস গোষ্ঠীর পক্ষেই বিবৃতি দিয়েছে ইরান। এই হামলাকে দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতিরোধ বলে, জানিয়েছে তারা। প্যালেস্টাইনি এলাকাগুলিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও হামাসের বিপুল সমর্থক আছে। হামাসের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে কাতারেরও। শনিবারের হামলার পর, এই পরিস্থিতির জন্য ইজরায়েলকেই দায়ী করেছে কাতার। আরব লিগ এবং জর্ডনও বর্তমান সংঘাতের জন্য ইজরায়েলের নীতিকেই দায়ী করেছে। মরক্কো এবং সৌদি আরবও, ইজরায়েলকে সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডা, মিশর এবং জাপান-সহ বেশ কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে গন্য করে। এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইজরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। হামাসকে জঙ্গিগোষ্ঠী আখ্যা দিয়ে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারতও।