অভিযোগ থাকলে প্রমাণ করুন: CBI-কে চ্যালেঞ্জ মদনের, বি.স্ফোরক পোস্ট ফিরহাদ-কন্যার

0
1

টানা ৬ ঘণ্টা ম্যারাথন তল্লাশির পর ‘নিটফল’ জিরো। ফাঁকা হাতেই তৃণমূলের কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের (Madan Mitra) বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। তবে রবিবার শুধু মদন মিত্রই নন, মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) বাড়িতেও তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই। রবিবার মদনের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল সিবিআইয়ের দু’টি দল। দুপুর আড়াইটে থেকে পৌনে তিনটের মধ্যে তারা বেরিয়ে যায় মদনের দু’টি বাড়ি থেকেই। পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় কামারহাটির বিধায়কের বাড়িতে এই তল্লাশি চালানো হয়।

তবে এদিন তল্লাশি প্রসঙ্গে মদন মিত্র বলেন, মা দুর্গা আসছে। মা দুর্গার আসা সিবিআই-ইডি আটকাতে পারবে না। সিবিআই আধিকারিকরা যা যা চেয়েছে আমি সব দেখিয়েছি। মদনের দাবি, যখন পুরসভার এই চাকরি হয়েছে তখন আমি জেলে ছিলাম। আর সেখানে বসে কীভাবে আমি এসব করলাম? কামারহাটির বিধায়ক এদিন আরও বলেন, আমার অফিসে একজন ভিখারি এলে আমি তাঁকে যথাসম্ভব সাহায্য করি। পাশাপাশি মদনের আরও অভিযোগ, পুরসভায় হাজার হাজার চাকরিতে আমার কোনও হাত আছে কী না তাঁর প্রমাণ কী? মদন মিত্র এরপরই বলেন, বুকের পাটা নিয়ে বলছি বেকার ছেলে মেয়েদের কাজের জন্য আমি শেষ রক্তবিন্দু অবধি লড়াই করব। আর যদি কোন দুর্নীতি প্রমাণ হয় তাহলে আমি নিজে গলায় দড়ি দিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দেব। অন্যদিকে, মদন মিত্রের আইনজীবী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ কিছুই করা হয়নি। সিবিআই সিজার মেমোতে লিখে দিয়ে গিয়েছে, কোনও নথিপত্র পাওয়া যায়নি। মদন মিত্র সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলা আরসি ১০ এ তল্লাশি হয়েছে।

রবিবার সকালেই কামারহাটির তৃণমূল বিধায়কের বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের একটি দল। এদিন মদনের ভবানীপুরের বাড়ির পাশাপাশি দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতেও হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তবে এদিন তল্লাশির সময় ভবানীপুরের বাড়িতেই ছিলেন কামারহাটির বিধায়ক। তবে এদিন কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মদনের বাড়ির সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র মদন মিত্রই নন, পুর নিয়োগকাণ্ডের তদন্তে এদিন সকালে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় সিবিআই। এদিকে রবিবার সাতসকালে চেতালায় ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। সিবিআই হানা প্রসঙ্গে ফিরহাদের মেয়ে প্রিয়দর্শিনী হাকিম ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, আমি আগেও বলেছি,এখনও বলছি। আমরা কোনওভাবে ভীত নই এই ধরনের রেড অথবা তল্লাশির ক্ষেত্রে। আমরা কোনও কিছু লুকিয়ে রাখতে চাই না। এরপরই ক্ষুব্ধ মন্ত্রী কন্যার প্রশ্ন, শুধুমাত্র সামাজিকভাবে অপমান করা এবং মানুষকে অনৈতিকভাবে হেনস্থা করা এই ধরনের তল্লাশির অর্থ কী? কী কারণে অনৈতিকভাবে মিডিয়া ট্রায়াল করা হচ্ছে এদিন সেই প্রশ্নও তোলেন ফিরহাদ হাকিমের বড় মেয়ে। কলকাতার পাশাপাশি একযোগে ১২ জায়গায় হানা দিয়েছে সিবিআই। উত্তর দমদম, উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়ার পাশাপাশি নিউ ব্যারাকপুর, কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, কৃষ্ণনগর প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িতেও পৌঁছে যায় সিবিআই। টাকির পুরপ্রধানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে খবর।

তবে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি থেকে নজর ঘোরাতেই রবিবাসরীয় সকালে দফায় দফায় কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে মোদি সরকার। এমনটাই দাবি তৃণমূলের। পাশাপাশি দিল্লিতে অভিষেকের প্রতিবাদের পায়ের তলার মাটি সরেছে কেন্দ্রের মোদি সরকারের। আর সেকারণে দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরেই রাজভবনের সামনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন অভিষেক সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর যুবরাজের এমন নাছোড় মনোভাব দেখে শনিবারই দিল্লি থেকে তড়িঘড়ি কলকাতায় এসে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। তবে এদিন মদন মিত্র ও ফিরহাদ হামিকের বাড়িতে তল্লাশি প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত একটি চিত্রনাট্য। অভিষেকের ধর্না কর্মসূচি হিট। বিজেপির উপর চাপ বাড়ছে। আর সেকারণে তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে কলকাতায় উড়িয়ে এনেও প্রভাব পড়েনি। আর সেকারণেই নজর ঘোরাতে বিজেপির নির্দেশিত পথে কয়েকজনের বাড়িতে সিবিআই পাঠান হয়েছে। কিন্তু এভাবে তৃণমূলকে দমানো যাবে না।