বাংলা-সহ ঝাড়খণ্ডে (Jharkhand) টানা বৃষ্টির জের। আর সেকারণেই ক্রমশ জলধারণের ক্ষমতা কমছে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের। তার ফলে জল ছাড়ল ডিভিসি। তবে পুজোর (Durga Puja) মুখে বাংলার ৭ জেলায় প্লাবনের আশঙ্কা। জানা গিয়েছে, প্রথম দফাতেই ১ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, নিম্নচাপ এখনও ঝাড়খণ্ডেই অবস্থান করছে। তবে তার গতি খুবই ধীর। হাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, এত সহজে দুর্বলও হবে না নিম্নচাপ। ফলে আরও অন্তত ৩-৪ দিন প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি বুধবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে খবর। ইতিমধ্যে, হলুদ সতর্কতা (Yellow Alert) জারি হয়েছে দামোদরের নিম্ন তীরবর্তী জেলাগুলিতে। তবে ডিভিসির এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে নবান্ন (Nabanna)। কোনওরকম আলোচনা না করে কেন পুজোর আগে জোর করে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

ইতিমধ্যে, রাজ্যের ৭ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। আর তার জেরেই গান্ধী জয়ন্তীতে ছুটির দিনেও নবান্নে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। একদিকে নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি, সঙ্গে ডিভিসির জলাধারগুলি জল ছাড়া শুরু করেছে। আগামী কয়েক ঘণ্টায় আরও জল ছাড়া হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে, সাত জেলার নীচু এলাকা থেকে মানুষজনের সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে। ডিভিসি-র জল ছাড়ার ফলে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া-সহ সাত জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে ডিভিসির জলাধারগুলি থেকে আরও জল ছাড়া হতে পারে মনে করা হচ্ছে। এদিকে প্লাবিত এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে আগেই নবান্নে আলোচনা হয়। কিন্তু সোমবার ছুটির দিনে ডিভিসি আরও জল ছাড়ার ফলে কী হতে পারে তার মোকাবিলা করতেই ফের তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হয়। এদিন পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূমের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। ওই বৈঠকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সবসময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বৈঠকের পর নবান্নের তরফে একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।


- মাইকিং করা থেকে ত্রাণ এবং উদ্ধারের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
- কোনও এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হলে জেলাগুলিকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে।
- ৫ ঘণ্টা অন্তর জেলাগুলিকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- ত্রাণ সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুত-সহ অন্যান্য বন্যা প্রতিরোধকারী উপকরণ, যেমন বালির ব্যাগ ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলিতে মজুত রাখতে হবে।
- উপযুক্ত আলো, ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের ব্যবস্থা করতে হবে।
- বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা তথ্য শেয়ার করতে বলা হবে।
- সেচ দফতরকে বাঁধগুলির দিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
এখনও পর্যন্ত মাইথন থেকে ৬০০০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ৭৩০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে সেচ দফতরকে ডিভিসি ও ঝাড়খণ্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।
তবে এই প্রথম নয়, প্রায় প্রতিবছরই বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জল ছাড়ে ডিভিসি। ডিভিসি জল ছাড়লে হাওড়া ও হুগলির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই নিয়ে ফি বছর রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিভিসি। আর সেই ধারা অব্যহত রেখে চলতি বছরও জল ছাড়া শুরু করল ডিভিসি। পূর্ববর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, জল ছাড়ার খবর মিলতেই প্লাবিত হতে পারে এমন সমস্ত ব্লককে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ মজুত রাখা ও ত্রাণ শিবির গুলিকে প্রস্তত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সমস্ত জরুরী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দফতরগুলির কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।









































































































































