আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। আর এনিয়ে রীতিমত চিন্তায় পড়েছেন মধ্যবিত্তরা। কীভাবে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা সুরক্ষিত থাকবে তা নিয়ে নানান প্রশ্ন এখন কমবেশি প্রায় সকলেরই মনে। এরইমধ্যে এ বার নতুন ত্রাস হয়ে উঠেছে ‘টেলিগ্রাম’। এই অ্যাপটির মাধ্যমেও চলছে প্রতারণা। গ্রাহকদের থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। যতক্ষণে গ্রাহক বুঝতে পারছেন, ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে।বহু গ্রাহকের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণা রুখতে সতর্কতামূলক গাইডলাইন চালু করল বিধাননগর কমিশনারেট ।
কীভাবে প্রতারণা চলছে?
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, মূলত দু’টি পদ্ধতিতে প্রতারকেরা টোপ ফেলছেন। তা গ্রহণ করলেই কেল্লা ফতে। অর্থ্যাৎ, সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রাহকেরা। কী সেই টোপ?
প্রথমে ঘরে বসে সহজে আয়ের সুযোগ দিয়ে চাকরির লোভ দেখানো হচ্ছে। এই প্রস্তাবে রাজি হলে তাঁদের টেলিগ্রাম গ্রুপে ঢুকতে বলা হচ্ছে। সেই গ্রুপে ইউটিউবের কিছু কিছু ভিডিয়োতে লাইক, কমেন্ট করার মাধ্যমে আয় করতে পারছেন অনেকেই।
এরপর শুরু হচ্ছে আসল খেলা। প্রথমে বেশ কয়েকবার টাকা হাতে পাওয়ার পর গ্রাহকেরও খুশি। পরের ধাপে বলা হয় এমন কিছু কাজ করতে বলা হচ্ছে, যেখানে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা দিতে হবে। এতে মিলছে ‘রিটার্ন’। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টেই আবার ফিরে আসছে। লোভে পড়ে এর পর অনেকেই বেশি টাকা বিনিয়োগ করার দিকে ঝুঁকছেন। প্রথম দিকে ‘রিটার্ন’ মিললেও এক সময় টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উল্টে, বকেয়া টাকা ফেরত দেওয়ার অছিলায় আরও বেশি অঙ্কের টাকা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনও টাকাই ফিরছে না।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমেই ছোট ছোট বিনিয়োগে বড় লাভের লোভ দেখানো হচ্ছে গ্রাহকদের। বেশ কিছু ভুয়ো অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে বলা হচ্ছে। অ্যাপগুলি এই প্রতারণার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও, প্রথম দিকে টাকা ফেরত পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। কিন্তু পরে আর কোনও টাকা মিলছে না। উল্টে যা দিয়েছিলেন, তা-ও হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। সর্বস্বান্ত হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন একের পর এক গ্রাহক।
কী করণীয়?
১)বিধাননগর পুলিশের পরামর্শ, অনলাইনে এমন যে কোনও ভুয়ো প্রস্তাব থেকে দূরে থাকুন। টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে কোনও বিনিয়োগকারী সংস্থা কাজ করে না।
২)অচেনা নম্বর থেকে কেউ যোগাযোগ করলে তাদের সঙ্গে অহেতুক কথা না বলাই ভালো।
৩) কোথাও কোনও বিনিয়োগ করার আগে সংস্থার সম্বন্ধে ভাল করে খোঁজখবর নিন।
৪) কোনও অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে লাভযোগ্য বিনিয়োগের প্রস্তাব পেলেই তার সত্যতা যাচাই করে নিন।
৫) টেলিগ্রামের কোনও অচেনা গ্রুপে ভুলবশত ঢুকে পড়লেও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসুন।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটে চলতি বছরে অন্তত ২৫টি একই ধরনের টেলিগ্রাম প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে। গত বছরে এমন কোনও অভিযোগই ছিল না। ফলে এই প্রতারণার ধরন নতুন। এ ভাবে এখনও পর্যন্ত ৪ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকেরা। পুলিশ তার মধ্যে ৩ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে। প্রতারকদের সন্ধান চলছে।