হোমওয়ার্ক করেই দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ বদলে ‘ভারত’ বানানোর খেলায় মেতেছে মোদি সরকার

0
1

সোমনাথ বিশ্বাস

সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আগে দেশজুড়ে জোর জল্পনা, এবার দেশের অফিসিয়াল নাম ইন্ডিয়া বদলে ভারত করার মতলবে আছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে। তাদের ভাবনা বা আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। কারণ, গত কয়েক বছরে একের পর এক রেল স্টেশন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সংস্থা কিংবা দ্রষ্টব্য স্থানের নামে বদলে দিয়েছে মোদি সরকার ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। এবার সংবিধানের ষষ্ঠীপুজো করে দেশের অফিসিয়াল নামটাই না বদলে দেয় কেন্দ্র!

গোটা দেশে বিজেপি তথাকথিত যে অরাজনৈতিক সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই আরএসএস বা সঙ্ঘ পরিবার অনেক আগে থেকেই দেশের অফিসিয়াল নাম ইন্ডিয়া বদলে ভারত করার দাবিতে সরব হয়েছে। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভগবত দাবি, ‘ইন্ডিয়া’ নাম কেন থাকবে? দেশের নাম শুধু ‘ভারত’ থাক। বাদ দেওয়া হোক ‘ইন্ডিয়া’। তাঁকে তুষ্ট করতে আবার দেশজুড়ে বিজেপির অনেক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ বাদ দিয়ে ভারত রাখার দাবি তোলেন।

ইতিমধ্যেই খুব কৌশলে কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর কোনও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে বা সরকারি নোটে ইংরেজিতেও ‘ভারত’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেছে। সরাসরি হয়তো সংবিধান পাল্টে দেশের নাম পরিবর্তনের রাস্তায় হাঁটবে না কেন্দ্র, কিন্তু দেশবাসীর মন থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি চরতরে ভুলিয়ে দেওয়ার লাগাতার চেষ্টা চলবে।

যেমন, বিরোধীরা ইতিমধ্যেই ব্যঙ্গ করে বলতে শুরু করেছে কোনওদিন হয়তো দেখা যাবে রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক ‘ইন্ডিয়া গেট’-কে বিজেপি নেতারা ‘ভারত গেট’ বলা শুরু করেছে। আবার ISRO বিজ্ঞানীদের সম্বর্ধনা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র বা বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্য সরকার সরকারি আমন্ত্রণ পত্রে BSRO লিখবে! রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া হয়ে যাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ভারত। IIT হয়ে যাবে BIT। IPS-IAS হয়ে যেতে পারে যথাক্রমে BPS-BAS.

অন্যদিকে, কেন্দ্রের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলছেন, দেশের নাম থেকে ইন্ডিয়া শব্দ বাদ দেওয়া হবে না। যদিও অনুরাগের ইঙ্গিত, ইন্ডিয়া শব্দের পাশাপাশি ভারত শব্দটিও চালু রাখতে চাইছে দেশের বর্তমান সরকার। তাঁর কথায়, ‘আমি একই সঙ্গে মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া এবং মিনিস্টার অফ ভারত।’ অর্থাৎ, মোদি সরকার সরকারি নথিতে ‘ভারত’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার শুরু করবে। তবে সরকারিভাবে ‘ইন্ডিয়া’ নাম থাকবে। সংবিধানে ‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’ লাইনটির কোনও পরিবর্তন হবে না। এই পদ্ধতি চালু করে একটা সময় দেশবাসীর মন থেকে ইন্ডিয়া শব্দটি ভুলিয়ে দেওয়া হবে। তখন সবাই ‘ভারত’ শব্দটির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ সাপও মরবে কিন্তু লাঠি ভাঙবে না।

খেয়াল করলে বোঝা যাবে, খুব সুকৌশলে এবং হোমওয়ার্ক করেই দেশের নাম বদলানোর খেলায় নেমেছে মোদি সরকার। তারা শুরুটা করল দেশের সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতিকে দিয়েই। যেমন, জি-২০ দেশগুলির সম্মেলনে আগত বিদেশি অতিথি এবং দেশের সব মুখ্যমন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের শনিবার নৈশ ভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। নিমন্ত্রণপত্রে দৌপদী মুর্মুকে দেখানো হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ হিসেবে। জি-২০’র বিষয়টি কিন্তু ব্যতিক্রমী ঘটনা নয় সেটাও বুঝিয়ে দিতে চাইছে মোদি সরকার। তা না হলে ইস্যুটি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাডড়ের মাঝেই ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই এবার প্রধানমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া সফর উপলক্ষ্যে সরকারি নোটে লেখা হয়েছে ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’, ইন্ডিয়া নয়! এমনভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ইন্ডিয়া নয়, ভারত শব্দটি রেওয়াজে পরিণত হবে। তাই রাতারাতি দেশের নাম বদলে ইন্ডিয়া থেকে ভারত করার রাস্তায় নাও হাঁটতে পারে মোদি সরকার। ধীরে চলো নীতিতেই দেশের নাম বদলে দেওয়ার খেলায় নেমেছে কেন্দ্র।