বন্ধ ইটভাটা৷বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।অথচ তার ভিতরেই ক’টা বাঁশ আর প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছোট ছোট অস্থায়ী ছাউনি৷ আর তার মধ্যেই তৈরি হত বাজি। প্রাথমিক ভাবে মজুতও করা হতো এখানেই। দত্তপুকুর বিস্ফোরণের ঘটনায় এবার এই ছাউনিগুলির দিকে বিশেষ নজর দিলেন তদন্তকারীরাও৷ কারণ,তারা মনে করছেন যে এই ছাউনিগুলোর মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা সংক্রান্ত আরও তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে৷তদন্তকারীদের দাবি, বাঁশ এবং প্লাস্টিক দিয়ে করা এই অস্থায়ী ছাউনিগুলোই আদতে ছিল কেরামতদের অবৈধ বাজি কারখানার ল্যাবরেটরি৷ এখানেই বাজি তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম রাখা থাকত৷ তৈরি হত বাজিও৷
এরই মধ্যে সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ফরেন্সিক দল।আদই সেই রিপোর্ট আসতে পারে।এদিকে ঘটনাস্থলে বারুদ এবং বাজি তৈরির সরঞ্জাম ছাড়াও কিছু ‘সন্দেহজনক’ রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ এমনকি, রাখা থাকত স্টোনচিপসও৷আজ মঙ্গলবারও হদিশ মিলেছে এখানে তৈরি করা কিছু মজুত বাজিরক৷ সেগুলিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সব মিলিয়ে গত রবিবার দত্তপুকুরের নীলগঞ্জের ওই বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনার পিছনে কী লুকিয়ে রয়েছে, তার হদিশ পেতে এই ছাউনিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷ সেই কারণেই মঙ্গলবার এই বন্ধ ইটভাটার গোটাটাই ঘিরে ফেলা হয়েছে পুলিশের তরফে৷
আসলে ইটভাটার ভিতরে থাকা এই ছাউনিগুলি থেকে যাতে কোনও ভাবেই কোনও তথ্যপ্রমাণ যাতে এদিকওদিক না হয়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে পুলিশ৷ Don’t cross ফিতে দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে বন্ধ ইটভাটার মূল গেট।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার দত্তপুকুরের নীলগঞ্জে একটি বাড়িতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে৷ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে৷ সাসপেন্ড করা হয়েছেন দত্তপুকুর থানার আইসি শুভব্রত ঘোষ এবং নীলগঞ্জ ফাঁড়ির ওসি হিমাদ্রি ডোগরা৷ স্থানীয়দের দাবি, বাড়ি ভাড়া নিয়ে বেআইনি বাজির কারবার ফেঁদে বসেছিল কেরামত আলি। গুদামে এখনও মজুত রয়েছে প্রচুর রাসায়নিক। পাশেই আরও একটি বন্ধ ঘরে বাজি ঠাসা রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ঘন জনবসতি এলাকায় এ ধরনের গুদাম থাকায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, দত্তপুকুরের মোচপোলের পাশেই কাঠুরিয়া গ্রাম। সেখানে আবার গ্যারাজ ভাড়া নেওয়ার নামে বাজি মজুত করা শুরু করেন আলতাফ, এমনই দাবি বাড়ি মালিকের। অভিযোগ, বিস্ফোরণের পর থেকেই আলতাফ বেপাত্তা। ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এদিকে, গুদামভর্তি নিষিদ্ধ শব্দবাজি। বিস্ফোরণের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে বাড়ি মালিক ও কাঠুরিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের।
ইতিমধ্যেই দত্তপুকুরের মোচপোল, কাঠুরিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ১ হাজার ৬০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রাতে ৫-৬টি গাড়ি করে উদ্ধার হওয়া বাজি নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। বাজি উদ্ধারে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি, এফআইআরে নাম থাকা রমজান আলি ওরফে কালোর খোঁজ করছে পুলিশ।এখনও অধরা রমজান। মূল অভিযোগকারী প্রভাস চক্রবর্তীর অভিযোগে নাম রয়েছে এই আইএসএফ কর্মীর। তাঁর বিরুদ্ধে কেরামত আলির সঙ্গে যোগসাজশে বেআইনি বাজি কারবারে মদত জোগানোর অভিযোগ রয়েছে।