বিশ্বের বুকে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO)। ২৩ অগাস্ট ২০২৩ যেন নতুন এক উপাখ্যান লেখা হয়েছে। চন্দ্রযান (Chandrayaan 3) উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে অবতরণ পর্যন্ত, প্রতি মুহূর্ত উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা (Scientists of ISRO)। অবশেষে বিনিদ্র রজনী যাপন সার্থক হয়েছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ গোলার্ধে সফল অবতরণ হয়েছে ল্যান্ডার বিক্রমের(Vikram)। পরিকল্পনা মতই কাজ করছে রোভার প্রজ্ঞান (Rover Pragyan)। সংস্থার চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুরুষ বিজ্ঞানীদের নাম প্রচারে এসেছে। চন্দ্রযান ৩ মিশনের সঙ্গে বাংলার ১২ জন গবেষকের যুক্ত থাকার কথাও আজ সবার মুখে মুখে। কিন্তু মহিলা বিজ্ঞানীদের (Women Scientists of ISRO) কথা, তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা আমরা কতটুকু জানি? মেধা কখনও লিঙ্গ বৈষম্য করে না, আমরা সেই বিষয়টিকে প্রশ্রয়ও দিতে চাইনা। কিন্তু মঙ্গল অভিযান থেকে চন্দ্রযান মিশন এবং ভবিষ্যতের গগনযান প্রকল্পেও ইসরোর যে সমস্ত মহিলা গবেষকরা নেপথ্যে কাজ করে চলেছেন আজ তাঁদের সঙ্গেই পরিচয় করে নেওয়ার পালা।
ভিআর ললিথম্বিকা
প্রথমেই যাঁর নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি ভিআর ললিথম্বিকা। ইসরোর ‘অ্যাডভান্সড লঞ্চার টেকনোলজি’র (Advance Launcher Technology) একজন বিশেষজ্ঞ। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা পরিচালিত ১০০টিরও বেশি অভিযানের অংশ তিনি। এর আগে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এই মুহূর্তে ইসরোর ‘গগনযান’ অভিযানের গুরু দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠানো। লঞ্চ ভেহিক্যাল টেকনোলজিতে তাঁর দক্ষতার কারণে ‘অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ড অফ এক্সিলেন্স’ সম্মান পেয়েছেন তিনি।
নন্দিনী হরিনাথ
প্রায় দু’দশক ধরে ইসরোর সঙ্গে জড়িত নন্দিনী হরিনাথ। এই সংস্থা থেকেই নিজের কর্মজীবন শুরু করেছেন। মার্স অরবিটার মিশন অভিযান (MOM) বা মঙ্গলযান অভিযানের ‘ডেপুটি অপারেশন ডিরেক্টর’ ছিলেন নন্দিনী। বর্তমানে তিনি ইসরোর প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং মিশন ডিজ়াইনার।
ভানিতা মুথাইয়া
ভারতীয় গবেষণা সংস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ ভানিতা মুথাইয়া। চন্দ্রযান-২ অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন ভানিতা।
মৌমিতা দত্ত
কলকাতার কন্যা মৌমিতা দত্ত এক জন পদার্থবিদ, যিনি মঙ্গল অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইসরোতে তিনি বাঙালি মহিলা বিজ্ঞানী।হাইস্যাট, চন্দ্রযান-১ অভিযানের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। ‘মঙ্গলযান’ অভিযানে অসামান্য দক্ষতার জন্য তাঁকে ইসরোর ‘টিম অফ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছিল।
অনুরাধা টি কে
ইসরোর এক জন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী হলেন অনুরাধা টি কে। যোগাযোগ সহায়ক উপগ্রহের বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি দীর্ঘ দিন ইসরোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনটি যোগাযোগ সহায়ক উপগ্রহ— জিস্যাট-৯, জিস্যাট -১৭ এবং জিস্যাট-১৮-এর উৎক্ষেপণে নেতৃত্ব দিয়েছেন অনুরাধা।
ঋতু কারিধাল
বিজ্ঞানী ঋতু কারিধাল ১৯৯৭ সাল থেকে ইসরোতে কাজ করছেন। মঙ্গলযানের সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম তিনিই।
মিনাল রোহিত
মিনাল রোহিত ইসরোর বিজ্ঞানী এবং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার। দ্বিতীয় চন্দ্রযানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মিনাল। বর্তমানে, তিনি ইসরোতে ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টরের পদে রয়েছেন।
যেকোনও বড় কাজ করতে গেলে নারী পুরুষ উভয়ের সহাবস্থান যে সাফল্যকে হাতের মুঠোয় এনে দেয় ইসরো সেটা প্রমাণ করেছে। চন্দ্রযান ৩ মিশনের সঙ্গে যুক্ত তিন মহিলা বিজ্ঞানীর সঙ্গে আজ আলাদা করে দেখা করে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁদের অধ্যাবসায়কে কুর্নিশ জানান।