চাঁদের মাটিতে ভোর হতেই খুলে গেল চন্দ্রযান-৩ ‘বিক্রম’-এর দরজা। ভিতর থেকে বেরিয়ে এল এই বিশাল কর্মযজ্ঞের ‘হৃদপিন্ড’ রোভার প্রজ্ঞান। একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইসরোর বিজ্ঞানীদের এতদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমকে বিফলে যেতে দিল না প্রজ্ঞানও। ইসরো আজ, বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে, অবতরণের কিছুক্ষণ পর থেকেই চাঁদের মাটিতে বিক্রমের চাকা গড়ানো শুরু করে দিয়েছে। ওই অংশে সেই সময় সদ্য ভোরের আলো ফুটছে।
ইসরোর দাবি, চাঁদে ঘুরতে ঘুরতে প্রজ্ঞান এখন পৃথিবীতে ইসরোর বিজ্ঞানীদের কাছে তথ্য পাঠাচ্ছে। আগামী ১৪ দিন এই বিশেষ যান চাঁদ থেকে যথাসম্ভব তথ্য সংগ্রহ করে ফেরত পাঠাবে দেশে। বিশেষ প্রযুক্তির এই যানের গতিবেগ খুবই সামান্য। প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ১ সেন্টিমিটার। কিন্তু চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এই মুহূর্তে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ নেই। তাই নিশ্চিন্তে নিজের গতিতে কাজ করতে পারবে ভারতের প্রজ্ঞান। সৌরশক্তি চালিত এই রোভারের চাকার সংখ্যা ছয়। বিজ্ঞানের দুনিয়ায় এই ছ’চাকার যন্ত্রের সাহায্যেই ছক্কা হাঁকাতে চায় ইসরো। খরচ হয়েছে নামমাত্র ৬১৩ কোটি টাকা।
কিন্তু ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এই বিপুল সাফল্যের পিছনেও অবদান আছে।‘রকেট ম্যান’ প্রয়াত এ পি জে আব্দুল কালামের। তাঁর পরামর্শেই বদলে গিয়েছিল ভারতের প্রথম চন্দ্রযানের নকশা। চন্দ্রপৃষ্ঠে না নামলেও চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে অসংখ্য ছবি পাঠিয়েছিল চন্দ্রযান-১। ৩ হাজার ৪০০ পাক ঘোরার পর শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের আগস্টে তার সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল ইসরোর।
চন্দ্রযান-১ তৈরির কাজ চলার সময় ইসরোর দফতর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দেশের একাদশতম রাষ্ট্রপতি। জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে প্রমাণ হবে চন্দ্রযান-১ সত্যিই চাঁদের কক্ষপথে ঘুরেছে? ইসরোর বিজ্ঞানীদের জবাব ছিল, চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি পাঠাবে এই যান। কিন্তু কালামের বক্তব্য ছিল, সেটা পর্যাপ্ত নয়। তাঁর পরামর্শ ছিল, চন্দ্রযানের সঙ্গে এমন একটি ডিভাইস পাঠানো হোক, যেটি কক্ষপথে ঘোরার সময় চাঁদের মাটিতে ফেলা হবে। কালামের সেই পরামর্শ মেনেই চন্দ্রযান-১-এর নকশা বদলানো হয়েছিল। পরে প্রথম চন্দ্রযানের ছবি দেখে খুশি হয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। বলেছিলেন, প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্ববোধ করা উচিত। সত্যি, আজ দেশবাসী গর্বিত। কারণ, ভারতের হাতের মুঠোয় চাঁদ।