বাংলার অর্থনীতিতে মজবুত করতে এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে জোর দিচ্ছে বাংলার সরকার। অন্যদিকে শিল্পপতিদের মুনাফা আরও বাড়াতে তাদের কর ছাড় থেকে শুরু করে ঋণ মুকুব করেছে মোদি সরকার(Modi Govt)। বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটের প্রেক্ষাপটে বুধবার দিল্লিতে(Delhi) সাংবাদিক বৈঠকে মোদি সরকারের এই নীতির তীব্র সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) মুখ্য উপদেষ্টা ডঃ অমিত মিত্র(Amit Mitra)।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে বড় শিল্পে লগ্নি টানার চেষ্টার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শিল্পন্নোয়নকে ভিত্তি করেই সামগ্রিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নের উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে রাজ্যে। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের পাশে নিয়ে ড: অমিত মিত্র জানালেন, কেন এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে সেরা গন্তব্য। আর এই প্রসঙ্গেই মোদি সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কন্যাশ্রী ,লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরাসরি সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ তুলে দিচ্ছে। এর ফলে বাজারে চাহিদা তৈরি হয়েছে যার সুবিধা পেয়েছে শিল্পমহল। অথচ মোদি সরকার করোনাকালে এর ঠিক বিপরীত কাজটাই করেছিল।” অমিত মিত্র বলেন, “করোনার সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার কর্পোরেট কর কমিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার ভেবেছিল, কর্পোরেটরা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোখাতে বিনিয়োগ করবে। যদিও তারা করেনি। বরং কর্পোরেট সংস্থাগুলি তাদের মুনাফা বাড়িয়েছিল। তার একটাই কারণ, বিপুল পরিমাণে কর কমিয়ে দেওয়া। তখন তো সব শিল্প উৎপাদন প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে, হ্রাস হওয়া করের টাকা পুরোপুরি তাদের মুনাফায় যোগ হয়েছে।”
একইসঙ্গে তিনি সংযোজন করেন, ‘মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন৷ কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত প্রয়োগ ভুল ছিল৷ করোনা কালে দেশে কোনও চাহিদাই ছিল না৷ এই ভুল নীতি গ্রহণ না করে সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সামাজিক খাতে ব্যায় বরাদ্দ বাড়িয়েছিল রাজ্য৷ গত বছরে এই খাতে ৮২,১৮০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার৷’ যারফলে বাংলায় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি হয়েছে বলে তিনি জানান। অমিত মিত্র বলেন, বাংলায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা করে দিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতিও ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী নভেম্বরের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্যে সম্মেলনে। ইতিমধ্যেই সেগুলি মন্ত্রিসভায় পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসার সুবিধা করে দিতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচ বাড়ানো হয়েছে।
এদিন পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১০-১১ অর্থবর্ষে পরিকাঠামো খাতে খরচ ছিল ২,২২৬ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পরিকাঠামো খাতে খরচ ১৫.৩ গুণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৪,০২৬ কোটি টাকা। সামাজিক পরিষেবা ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। ২০১০-১১ সালে সামাজিক পরিষেবা ক্ষেত্রে খরচ ৬,৮৪৬ কোটি থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে হয়েছে ৮২,১৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে এইখাতে খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে ১২ গুণ। অমিত মিত্র জানান, যানজট এড়াতে উড়ালপুলের ওপর জোর দেওয়া, নিকাশী ব্যবস্থা, পানীয় জল সরবরাহের উন্নয়ন ঘটিয়ে বর্তমান সরকার বিনিয়োগের আদর্শ পরিবেশ গড়ে তুলেছেন। তিনি আরও জানান, “ব্যাঙ্কগুলি বিপুল পরিমাণে ঋণ দিয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলাম তার থেকে বেশি ঋণ দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। তারই সুফল পাচ্ছেন উদ্যোগপতিরা।” আমরি হাসপাতাল, টাটা স্টিলের যৌথ উদ্যোগ টিএম ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিকস লিমিটেড, টিটাগড় রেল সিস্টেম লিমিটেডের পাশাপাশি ওয়াও মোমোর সিইও উপস্থিত ছিলেন এদিনের আলোচনায়। বাংলায় বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের প্রশংসা করেন প্রত্যেকেই এবং ভবিষ্যতে আরও লগ্নি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সকলেই।