যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া মহম্মদ আসিফ আনসারি।আর এই খবর পাওয়ার পরেই ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন মা ইসরত পারভিন।কিছুতেই মানতে পারছেন না, ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে তার ছেলে যুক্ত। বরং তার দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ে মৃত্যু হওয়া প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে সাহায্য করতে গিয়ে আসিফ ফেঁসে গিয়েছেন। স্ত্রীকে সামলাতে গিয়ে চোখের জল বাধ মানছে না আসিফের বাবা আফজল আনসারির।
বুধবার ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।আসিফের বাবা বলেন, ‘‘কী করব, কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না।’পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতভর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকেরা।মোট ধৃতের সংখ্যা হল ৯।
আসিফের বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের উত্তর আসানসোলে রেলপাড় কেটি রোডে।তার বাবা আফজল কাপড় ফেরি করেন। মা ইসরত গৃহবধূ। টালির চাল দেওয়া ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবু বড় ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন।কিন্তু ছেলের গ্রেফতারির পর সব ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে।
আসিফের বাবা-মা জানিয়েছেন, ঘটনার দু’দিন পর আসানসোলের বাড়িতে এসেছিল ছেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোন করে তাঁকে একাধিক বার ডাকা হয়। তাই দু’দিন পরেই কলকাতা চলে যান। মায়ের দাবি, ‘‘ছেলে জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে ও কোনও ভাবে যুক্ত নয়।’’ তবে মৃত ছাত্রকে নিয়ে বাড়িতে তিনি গল্প করেছিলেন। আসিফের মায়ের কথায়, ‘‘ওই ছেলেটি যখন ভয় পেত, আমার ছেলে ওকে সাহায্য করত। বন্ধুর মতো ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ আসিফের বাবা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০-১১টার মধ্যে ছেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। তখন আসিফ জানায়, সে পড়াশোনা করছে। এর পর রাত দেড়টা নাগাদ তাঁরা খবর পান, আসিফ-সহ কয়েক জনকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। প্রৌঢ় আফজল শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করে এক আইনজীবীকে নিয়ে কলকাতা রওনা হয়েছেন।
আসিফের মতোই বুধবার যাদবপুরের প্রাক্তনী অসিত সর্দারকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তিনিও মেন হস্টেলেই ছিলেন।যদিও অসিতের মায়ের দাবি, তাঁর ছেলে নির্দোষ।জানা যাচ্ছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা অসিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করতেন। পাশও করার পরেও তিনি হস্টেলে থাকতেন। বুধবার ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়ে অসিতের মা সুমিত্রা সর্দার বলেন, ‘‘বাড়িতে কয়েক দিন ছিল। কী একটা বই হারিয়ে গিয়েছে বলল। ওই সব জমা দিতে কলকাতা গিয়েছিল।ওই ঘটনার পর (ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা) বাড়ি চলে এসেছিল। ওখানে নাকি থাকতে দেয়নি বলল।’’ তিনি আরও জানান, ছেলে জানিয়েছে যাদবপুর থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আবার যেতে হবে। এই বলে রাতেই ঘুম থেকে উঠে চলে যান কলকাতা। তার পরেই ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়েছেন তিনি।
তবে হস্টেলের কোনও ঘটনা, কোনও গল্প অসিত বাড়িতে করতেন না বলে দাবি তাঁর মায়ের। তবে তাঁর ছেলে র্যাগিং করতে পারে— এটা ভাবতেই পারেন না অসিতের মা। তিনি বরং দাবি করেন, ‘‘ও এমন কিছু করতেইই পারে না। আমার ছেলে জড়িত নেই ও সবে। আমার ছেলে নির্দোষ।ছেলে তাদের বলেছে, ঘটনার সময় রুমে ছিল। ও কিচ্ছু জানে না।
তবে এই দাবি কতটা সত্যি তা সময়ই বলবে।আপাতত ধৃতদের বুধবার আদালতে পেশ করে নিজাদের হেফাজতে নিতে চায় পুলিশ।