প্রয়াত হলেন প্রাক্তন ফুটবলার মহম্মদ হাবিব, কলকাতা ময়দানে যিনি পরিচিত ছিলেন বড়ে মিঞা নামে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ হায়দরাবাদের বাসভবনে মৃত্যু হয় কিংবদন্তি ফুটবলারের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।গত দু’বছর তিনি ডিমেনশিয়া ও পারকিনসন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী ও তিন কন্যাকে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৬-এর মধ্যে হাবিব ভারতের হয়ে বহু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মাঠে নামেন। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাঁকে।
সৈয়দ নইমুদ্দিনের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন হাবিব। সেই দলের ম্যানেজার ছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৭৭ সালে কসমস ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে মোহনবাগানের হয়ে মাঠে নামেন হাবিব। সেই ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন কিংবদন্তি পেলে।
হায়দরাবাদে জন্ম হলেও হাবিবের ফুটবলার জীবনের অনেকটা সময় কাটে কলকাতা ময়দানে। তাঁর ভাই মহম্মদ আকবরও ফুটবল পায়ে কলকাতা ময়দান মাতিয়েছেন। কলকতা ময়দানে দুই ভাইয়ের একজনকে ডাকা হতো বড়ে মিঞা নামে এবং অন্য ভাই পরিচিত ছিলেন ছোটে মিঞা নামে।খেলা ছাড়ার পরে কোচিংও করিয়েছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন হাবিব। উপস্থিত ছিলেন লাল-হলুদ শিবিরের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানেও। ইস্টবেঙ্গলের তরফে ভারত গৌরব সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে।
হাবিবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। শোকবার্তায় তিনি লেখেন, স্বাধীনতা দিবসের দিন ভারতীয় ফুটবলে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত প্রাক্তন ফুটবলার মহম্মদ হাবিব। কলকাতা ময়দান হারাল ‘বড়ে মিঞা’-কে। ষাট ও সত্তরে দশকে কলকাতা ও ভারতীয় ফুটবলে দাপিয়ে খেলেছেন তিনি। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান। খেলেছেন তিন প্রধানেই। ১৯৭৭ পেলের কসমসের বিরুদ্ধে মোহনবাগান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন লড়াকু এই ফুটবলার। ১৯৭০ সালে এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জ জয়ী ভারতীয় ফুটবল দলে ছিলেন তিনি। খেলার ছাড়ার পর কোচিং করিয়েছিলেন মোহনবাগান ও মহমেডানে।
হায়দরাবাদে তাঁর জন্ম হলেও মহম্মদ হাবিবের ফুটবলার জীবনের উত্থান ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতায়।১৯৬৬ সালে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। লাল-হলুদ জার্সিতে খেলেছিলেন বেশিরভাগ সময়ে। যদিও মোহনবাগানের জার্সিতে ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন হাবিব।ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান থেকে মহামেডান, কলকাতার বড় দলে চুটিয়ে খেলা এই কিংবদন্তি ফুটবলার বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতেও খেলেছেন। ১৯৮০ সালে পেয়েছিলেন অর্জুন পুরস্কার। ২০১৫ সালে পেয়েছেন ভারত গৌরব পুরস্কার। ২০১৯ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ফুটবলজীবনের স্মৃতি অবশ্য আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট ছিল না। পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন হাবিব। ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল ফেলে আসা সবুজ মাঠের সব সোনালি স্মৃতিগুলো। কাউকে সেভাবে চিনতে পারতেন না। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেন। চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ছিলেন তিনি। ১৫ অগস্ট বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হায়দরাবাদের নিজের বাড়িতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৪ বছরের মহম্মহ হাবিব।
আমাদের সবার প্রিয় ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা ফুটবলার মহম্মদ হাবিব।তাঁর প্রয়াণ ভারতীয় ফুটবলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁর পরিবার, পরিজন ও অসংখ্য অনুরাগীদের জানাই আমার আন্তরিক সমবেদনা।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১৮ বছর কখনও মোহনবাগান তো কখনও ইস্টবেঙ্গল আবার কখনও মহামেডান জার্সিতে ময়দান কাঁপিয়েছেন হাবিব। লাল-হলুদের জার্সিতে খেলেছেন ৮ বছর। গোল করেছিলেন ১১৩টি। ৬০ এবং ৭০ দশকের কলকাতা ফুটবলের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন মহম্মদ হাবিব। শুধু ক্লাব নয়, দেশের জার্সিতেও খেলেছেন ময়দানের এই কিংবদন্তি ফুটবলার। ১৯৬৯ সালে বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জেতেন তিনি। সেবার সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছিলেন। জোড়া হ্যাটট্রিক-সহ ১১টি গোল ছিল তাঁর ঝুলিতে।