ওরা কেউ ভাবেনি এমন দিন আসতে পারে।অবোধ মন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে সবাই আছে, কিন্তু সৌরনীল কেন নেই।অতটুকু খুদেরও তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।আর সে কথাটা বলতে গিয়ে রীতিমতো কেঁদে ভাসালো আর এক খুদে।কারণ, তার বাবা-মা বলেছে যে প্রিয় বন্ধু এখন তারাদের দেশে।কিন্তু কী করে যে বন্ধু সেদেশে চলে গেল সেটা বোঝার বয়স যে তার হয়নি!ভালো করে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ কথাটাও স্পষ্ট করে বলতে পারে না। তবু আধো আধো গলায় জিজ্ঞেস করে, সৌরনীলের ‘কী হয়েছে?’
বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকেই আবার কিছুই জানে না যে তাদের বন্ধুর ঠিক কী হয়েছে। অনেকেই জানে না যে তাদের প্রিয় বন্ধু আর কখনও এসে বলবে না ‘আমিও আজ চাউ এনেছি।তোকেও একটু দেব’।আসলে তার মর্মান্তিক মৃত্যুর দু’দিন পরেই এসেছে ফ্রেন্ডশিপ ডে। সোমবার স্কুলে গিয়েই হয়তো বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাত সে, হয়তো বন্ধুদের হাত ভর্তি করে বাঁধত ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড।কিন্তু সব শেষ হয়ে গিয়ে ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে।ওই ক্লাসেরই একরত্তি পড়ুয়া সৌরনীল শুক্রবার ভোরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে স্কুলের সামনেই।
রবিবার স্কুল বন্ধ থাকবে তাই শনিবারই ফ্রেন্ডশিপ ডে পালন করেছে বড়িশা হাইস্কুল। এদিন সদ্যহারানো বন্ধুকে স্মরণ করে স্কুলের পড়ুয়ারা। সেখানেই চোখ ভিজে এসেছে সহপাঠীদের। সৌরনীলের গৃহশিক্ষক ও পাড়ার বন্ধুরাও এই দিনটিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে সৌরনীলের একটি ছবি এঁকেছে।পাড়ার খুদেদের হাতে তাদের মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা বন্ধুর ছবিতেও ফুটে উঠেছে যন্ত্রণা।
কাকতালীয়ভাবে দুর্ঘটনার আগের দিন, বৃহস্পতিবার সৌরনীল তার আঁকার খাতাটা ভুল করে স্কুলে ফেলে এসেছিল। বন্ধু অংশু সেটা পরের দিন ফেরত দেবে বলে নিজের কাছে রেখেছিল। কিন্তু ছোট্ট অংশুরও জানা ছিল না, সেই খাতা আর কোনওদিন ফেরত দিতে পারবে না বন্ধুকে। আজীবন আগলে রাখতে হবে তাকেই! ওইদিন সৌরনীলের স্কুলে আসেনি, স্কুলের বাইরে এত ঝামেলা হয়েছে, পুলিশ পুলিশে ছয়লাপ দেখেও অবশ্য অংশু বুঝে উঠতে পারেনি, আসলে কী হয়েছে!শুধু মা তাকে বলেছে, সৌরনীল আর কখনওই আসবে না স্কুলে, ফেরত নেবে না আঁকার খাতা।
সৌরনীলের চলে যাওয়ার ঠিক পরপরই এবারের ফ্রেন্ডশিপ ডে এবার তাই বিষাদময়! বড়িশা হাইস্কুলের ছোট ছোট কচি মুখগুলো ভয়ে, কষ্টে এখনও দিশাহারা।এই না-বোঝা যন্ত্রণা দিয়েই হয়তো খুদেরা চিরকাল আগলে রাখবে সৌরনীলের স্মৃতি। কারও কাছে চিরজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে প্রিয় বন্ধুর আঁকার খাতা, কারও স্মৃতিতে থেকে যাবে টিফিন পিরিয়ডের দুষ্টুমি, আবার কারও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করবে বল নিয়ে কাড়াকাড়ির ছবি।