মোদি পদবি মামলায় বড় স্বস্তিতে রাহুল! সুরাট আদালতের নির্দেশে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ

0
3

মোদি পদবি (Modi Surname) মামলায় স্বস্তিতে কংগ্রেস নেতা (Congress Leader) রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court of India) তরফে সুরাট আদালতের (Surat Court) সাজার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল। ২০১৯ সালে মোদি পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মানহানির মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। চলতি বছরই গুজরাটের সুরাট আদালত ওই মামলায় রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয়। সেই সাজায় স্থগিতাদেশ চেয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সোনিয়া তনয়। তবে এদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ওয়েনাড়ের বরখাস্ত সাংসদ রাহুল গান্ধীর পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভবনাও প্রকট হল। এদিন আদালতের রায় নিয়ে রাহুল বলেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, আমার কর্তব্য একই থাকবে। ভারতের আদর্শ রক্ষা করতে হবে। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন, আমার পথ পরিষ্কার। আমাকে কী করতে হবে তা নিয়ে আমি অবগত। আমাকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ।” সু্প্রিম কোর্টে রাহুলের স্বস্তি মেলার পর মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, “ও সত্যের জন্য লড়ছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত চার হাজার কিলোমিটার হেঁটেছে মানুষের সঙ্গে মেশার জন্য। তাঁদের আশীর্বাদেই এই স্বস্তি মিলল।

 

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে মোদি পদবি মানহানি মামলায় রাহুল গান্ধীর সাজার শুনানিতে বলা হয়, ওই মামলায় রাহুল গান্ধীকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি পিএস নরসিমহা ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। রাহুল গান্ধীর তরফে উপস্থিত আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এদিন শীর্ষ আদালতে জানান, মোদি পদবি নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যে মন্তব্য করেছিলেন, তা সমাজবিরোধী অপরাধ নয়। এরপরই অভিষেক মনু সিংভি প্রশ্ন তোলেন, এটা কোনও ধর্ষণ বা খুনের অপরাধ নয়। তবে সর্বোচ্চ সাজা কেন দেওয়া হল? এদিকে রাহুলের সাজা স্থগিতের পরেই দেশজুড়ে খুশির উ‍ৎসবে মেতে উঠেছেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গায় আতশবাজি পুড়িয়ে, মিষ্টিমুখ করে চলছে আনন্দ প্রকাশের পালা। দুপুরে শীর্ষ আদালতের রায়ের পরেই কংগ্রেস কর্মীরা এআইসিসির দফতরে রাহুলের ছবি, পোস্টার হাতে ভিড় জমান। ঢোল-তাসা নিয়ে নৃত্য করার পাশাপাশি রাজীব তনয়ের নামে জয়ধ্বনিও দেন। দীর্ঘদিন বাদে কংগ্রেসের সদর দফতরে উ‍ৎসবের আবহ লক্ষ্য করা যায়। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বোন প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গে কংগ্রেস সদর দফতরে পৌঁছন রাহুল। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়ান। আগে থেকেই দলের সদর দফতরে হাজির হয়েছিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় কর্নাটকের কোলারে মোদি পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গত ২৩ মার্চ গুজরাতের সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা দু’বছর জেলের সাজা দিয়েছিলেন রাহুলকে। এরপর গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদীর দায়ের করা ওই অপরাধমূলক মানহানি মামলায় দোষী রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের জন্য তাঁকে ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন বিচারক। সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২৪ মার্চ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮(৩) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেছিলেন। এরপরই সুরাট কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাহুল গান্ধী। গত ৭ জুলাই গুজরাট হাইকোর্ট রাহুল গান্ধীর সাজার উপরে স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ করে দেয়। এরপর ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গত ১৫ জুলাই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস নেতা।

তবে আইনজীবীদের একাংশের দাবি, শীর্ষ আদালত সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সাংসদ পদ ফিরে পেতে পারেন রাহুল। সুরাট দায়রা আদালত এবং গুজরাট হাই কোর্টের মতো সুপ্রিম কোর্টেও রাহুলের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে তাঁর জেলে যাওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়ত। কিন্তু শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জেলযাত্রা থেকে রেহাইয়ের পাশাপাশি রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর পথও মসৃণ হল বলেই মত আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের। সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের পরই লোকসভায় রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ ফেরানোর আর্জি জানান লোকসভার দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। দেখা করতে যান স্পিকারের সঙ্গে। সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের রায়দানের পরই কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল ফোন করেন অধীর চৌধুরীকে। এরপরই তিনি স্পিকারের কাছে যান। কংগ্রেসের বাকি সদস্যরাও সংসদের গেটে ‘ভি ফর ভিকট্রি’ স্লোগান দেন।