বিচ্ছেদের পরেও প্রথম বিয়ের দায় এড়াতে পারেন না স্বামী, রায় দুই হাই কোর্টের

0
1

বিবাহ বিচ্ছেদ মানেই প্রথম বিয়ের দায় ঝেড়ে ফেলা নয়। অর্থ্যাৎ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলেও প্রথম বিয়ের দায় নিতে তিনি বদ্ধপরিকর। বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন করা এক ব্যক্তির করা মামলায় এমনই রায় দিল এলাহবাদ হাই কোর্টে। সেইসঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ অবৈধ বলেও গণ্য করে আদালত। অন্য একটি ঘটনায় প্রায় ন’বছর একসঙ্গে সংসার করার পর প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল ‘পার্সোনাল ল’ অনুযায়ী দ্বিতীয় বিয়ে স্বীকৃত হলেও প্রথম স্ত্রীর দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না স্বামী। কাকতালীয় হলেও দুই হাইকোর্টের এই দু’টি রায় তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে আইনজ্ঞ মহল। কারণ, দু’টি ক্ষেত্রেই বিস্তর সওয়াল-জবাবের পর আদালত প্রথম স্ত্রীদের পক্ষেই রায় দিয়েছে।


আরও পড়ুনঃ টম্যাটো কৃষকের উপর ফের হা*মলা, লক্ষাধিক টাকা লুট দুষ্কৃতীদের

এলাহাবাদ হাইকোর্টের ওই মামলার পর্যবেক্ষণ, রাঘবেন্দ্র সিং নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় প্রতিমা সিংয়ের। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠায় বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন রাঘবেন্দ্র। বৈবাহিক সম্পর্ক ফিরে পেতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন প্রতিমাদেবী। শেষ পর্যন্ত রাঘবেন্দ্রর দায়ের করা বিচ্ছেদের মামলা খারিজ হয়ে যায় এবং প্রতিমাদেবীর পক্ষেই রায় যায়। রাঘবেন্দ্রকে তাঁর সঙ্গেই সংসার করার নির্দেশ দেয় পারিবারিক আদালত। কিন্তু ততদিনে গরিমা সিং নামে আরেক মহিলাকে বিয়ে করেছেন রাঘবেন্দ্র। সেই বিবাহের স্বীকৃতি এবং পারিবারিক আদালতের আগের নির্দেশ বাতিলের দাবিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাঘবেন্দ্রর দ্বিতীয় স্ত্রী গরিমা। ওই মামলা চলাকালীন রাঘবেন্দ্রর মৃত্যু হয়। সব পক্ষের শুনানির পর গরিমার আবেদন তথা দ্বিতীয় বিয়ে বাতিলের রায় দিয়ে পারিবারিক আদালতের আগের নির্দেশই বহাল রাখে বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিং ও বিচারপতি বিনোদ দিবাকরের ডিভিশন বেঞ্চ।


এদিকে, কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হওয়া একটি মামলায় বিচারপতি শম্পা দত্ত (পাল) রায়ে জানিয়েছেন, ‘পার্সোনাল ল’ অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেও প্রথম স্ত্রীর ভরণপোষণের দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না। এর আগে জেলা আদালত মালদহের ওই ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী’র ভরণপোষণের খরচ মাসে ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করে দেয়। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহিলা। ২০০৩ সালের ১২ অক্টোবর ওই মহিলার বিয়ে হয়। কিন্তু পণের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তাঁর স্বামী। এরপর ‘পার্সোনাল ল’ অনুযায়ী ওই ব্যক্তি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘পার্সোনাল ল অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু ৯ বছর সংসার করার পর প্রথম স্ত্রীর দেখভালের দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না।’ এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গেই নিম্ন আদালত খোরপোশের অঙ্ক কমিয়ে দেওয়ার যে রায় দিয়েছিল, তাও বাতিল করে দেন বিচারপতি দত্ত।