দু’মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বিজেপি শাসিত ডাবল ইঞ্জিন মণিপুর। জাতিদাঙ্গাকে কেন্দ্র করে খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি, বাদ নেই কোনও কিছুই। মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে বিরোধী শিবির। এ বার লোকসভায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছে বিরোধী জোট “INDIA”. তৃণমূল, ডিএমকে সহ বিরোধী দলের স্ট্র্যাটেজি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেই মতো লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী আজ, সোমবার সকালে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ দিচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃহাই কোর্টের নির্দেশে রাতেই মানিককে জেরা করতে জেলে সিবিআই!
অন্যদিকে, বিরোধীদের এমন পদক্ষেপের খবর পেয়েই তড়িঘড়ি অধীররঞ্জন চৌধুরী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিরোধী দলের নেতাদের চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লিখেছেন, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনদেরও। মণিপুর ইস্যুতে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে মণিপুর ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিন।
যদিও বিরোধীরা অনড়। স্পিকারের ডাকা বৈঠকে অধীর-সুদীপরা জানিয়েছেন, মণিপুর ইস্যুতে তাঁরাও আলোচনা চান। তবে তা বিস্তারিত এবং জবাব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। বিষয়টি নিয়ে সংসদের বাইরে বলতে পারছেন প্রধানমন্ত্রী, তাহলে অন্দরে কী সমস্যা? যদিও বৈঠকে উপস্থিত সংসদ বিষয়কমন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি জানিয়ে দেন, বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলার। তাই জবাব দেবেন অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নন। সরকারের এই অবস্থান জেনেই ঠিক হয় আনা হবে অনাস্থা প্রস্তাব।
২০০৩ সালের পর এই প্রথমবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বিরোধীরা। সেইসময় অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তবে লোকসভায় বিজেপির হাতে যে সংখ্যা আছে, তাতে অনাস্থা প্রস্তাবে কোনও সমস্যা হবে না মোদি সরকারের। কারণ, লোকসভায় বিজেপি সহ এনডিএ জোটের এমপির সংখ্যা ৩৩৫। ‘ইন্ডিয়া’ জোট ১৫৪। কোনওপক্ষেই সরাসরি না থাকা এমপির সংখ্যা ৪৬।
তাহলে অনাস্থা প্রস্তাবে কী লাভ? ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের ব্যাখা, ফায়দা রাজনৈতিক। মোদির ইমেজে ধাক্কা। কারণ, অনাস্থা প্রস্তাবে জবাবি ভাষণ দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেই। এটিই বিধি। ফলে সংসদের অন্দরে মুখ খুলতেই হবে মোদিকে। দ্বিতীয়ত, অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনা কোনওভাবে সরকার এড়াতে চাইলে ইন্ডিয়া জোট বলার সুযোগ পাবে মোদি সরকার পালাচ্ছে। তৃতীয়ত, মণিপুরে মূলত অত্যাচারিত আদিবাসীরা। লোকসভায় আদিবাসী আসন ৪৭। তাই কোন দল আদিবাসী এবং একইসঙ্গে মোদি বিরোধিতায় ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে, তারও জলমাপা হয়ে যাবে। অনাস্থা প্রস্তাবের নিয়ম হল, কোনও এক এমপির আবেদনের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৫০ জনকে সমর্থন করতে হবে। তাহলেই স্পিকার বাধ্য হবেন তা গ্রহণ করতে। অর্থাৎ অনাস্থা প্রস্তাব এনে মনস্তাত্ত্বিক চাল দিতে চাইছেন বিরোধীরা। সেইসঙ্গে বিরোধীরা একজোট হয়ে দেশবাসীর কাছে একটি বার্তা দিতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।