বিরল অঙ্গ প্রতিস্থাপন SSKM-এ, একজনের দেহে বাঁচবে ৭জনের জীবন

0
2

বাংলার চিকিৎসা শাস্ত্রে নয়া নজির! ফের শহর কলকাতার এসএসকেএম (SSKM) স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাল। হাওড়ার এক দিনমজুরের ব্রেন ডেথ আরও ৭ পরিবারে ফিরিয়ে দিল অনাবিল আনন্দ। এবার ব্রেন ডেথ (Brain Death) হওয়া মানুষের দুটি হাত অন্য মানুষের দেহে বসল। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। তবে এই ঘটনা শুধু বিরল নয়, বাংলার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিপ্লব। পূর্ব ভারতে এমন ঘটনা এই প্রথম। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের এই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানোন্নয়ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সৌজন্যে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই বাংলার চিকিৎসা ব্যবস্থা সাফল্যের শিখরে। তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন, এর পিছনে চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টা যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার।

এদিকে মৃত ব্যক্তির দুটি হাত প্রতিস্থাপন করা হল শনিবার। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার চলে। সকাল ছটা থেকে এই প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়। একটি একটি করে অঙ্গের নানা সূক্ষ্ম শিরা-ধমনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে খবর। জানা গিয়েছে, গত ৯ জুলাই হাওড়ার রাজাপুরের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর হরিপদ রানা (৪৩) পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তারপর এসএসকেএম ট্রমা কেয়ারে ভর্তি ছিলেন। তবে দীর্ঘ চেষ্টার পর শুক্রবার বিকেলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। পরে বাড়ির লোককে জানিয়ে দেওয়া হয়, হরিপদর ব্রেন ডেথ হয়েছে। প্রথমে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমাকেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে চিকিৎসকরা হাল ছাড়েননি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন হরিপদ যাতে সবার মধ্যে বেঁচে থাকে এমন ব্যবস্থা করা হোক।

আর এমন খবর পেয়ে পিজি-অধিকর্তা সব খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেন। তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ড। সব যখন ঠিক, সেই সময়ে আবার প্রস্তাব শুধু চোখ, কিডনি, ফুসফুস নয়, স্বামীর দুটি হাতও যদি কোনও রোগীর কাজে লাগে, তা দান করতে তৈরি হরিপদর স্ত্রী স্বপ্না। এদিন ভোর রাতেই গ্রিন করিডর তৈরি করে হার্ট নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়ার নারায়না হাসপাতালে। সেখানেই হার্ট প্রতিস্থাপন হয় কল্লোল কুমার চৌধুরীর (৫৭) শরীরে। একে একে এসএসকেএম ট্রমা কেয়ার থেকে বেরোতে শুরু করে বাম ও ডান কিডনি। দুটিই বসে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন দুই ব্যক্তির শরীরে।

কর্নিয়া চলে যায় হাসপাতালের অপথ্যালমোলজি বিভাগে। স্কিন ও টিস্যু সংরক্ষিত করা হয় হাসপাতালেই। এসএসকেএমেই চিকিৎসারত ২৭ বছরের এক যুবক। দুর্ঘটনায় বাদ পড়েছে দুটি হাত। ফের হরিপদ বাবুর বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডাক্তাররা। শনিবার দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে দাঁড়িয়ে মৃতের ছোট ভাই দেবকুমার বলেন, বৌদির অদম্য ইচ্ছাশক্তির জন্য এমন ঘটনা সম্ভব হল। দাদার অন্যান্য অঙ্গের সঙ্গে কনুইয়ের একটু নিচের থেকে দুটি হাত নেওয়া হয়েছে। এখন সেই হাত দুটি অন্যের হাতে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এসএসকেএম-র অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই পূর্বাঞ্চলের কোনও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির হাত জীবিত ব্যক্তির শরীরে জোড়া লাগানো এই প্রথম। এটা সম্ভব হয়েছে হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অদম্য মনের জোরের জন্য। একইসঙ্গে তিনি স্বপ্নাদেবীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অস্ত্রোপচার সফল হতে চলেছে।