বিজেপির ক্ষমতাস্পৃহা যে কতখানি নিচে নামতে পারে তার বর্তমান উদাহরণ উত্তর-পূর্বের অশান্ত রাজ্য মণিপুর(Manipur)। বিগত ২ মাস ধরে এই রাজ্য অগ্নিদগ্ধ। শান্তি ফেরাতে ব্যর্থ স্থানীয় প্রশাসন। দায়িত্ব পালনে চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ার পরও ক্ষমতা থেকে সরতে নারাজ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। বরং ক্ষমতা ধরে রাখতে শুক্রবার দফায় দফায় নাটক করে করে গেলেন তিনি। দিনের শেষে জানিয়ে দিলেন, “ইস্তফা দেব না।” বীরেন সিংয়ের(Biren Singh) এহেন সিদ্ধান্তের পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কী আদৌ শান্তি ফিরবে মণিপুরে? বিজেপি(BJP) শাসিত রাজ্যগুলিতে তাহলে কি অমিত শাহের(Amit Shah) রাশ আলগা হয়ে পড়েছে? নাহলে শাহের নির্দেশ বীরেন অমান্য করেন কীভাবে? নাকি বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে জ্বলন্ত মণিপুরে অকর্মণ্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি জনতার সমর্থন দেখাতে এই ‘নাটকের খেলা’ খেললেন খোদ অমিত শাহ ও বীরেন সিং?
মণিপুর রাজ্যে আজ সারা দিনের ছবিটায় চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, আজ দুপুর ১ টায় ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে রাজভবনে গিয়ে ইস্তফা দেওয়ার কথা ছিল বিজেপির অকর্মণ্য মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর একদল মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা দাবি করেন, অশান্ত পরিস্থিতিতে ইস্তফা নয় বরং শক্ত হাতে হাল ধরুন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর একটি ছেড়া ইস্তফাপত্রের ছবি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তারপর সমর্থকদের দাবি মেনে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন জানান, “এই কঠিন সময়ে আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে, আমি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেব না।” সকাল থেকে মণিপুরে চলতে থাকা এই নাটক দেখে রাজনৈতিক মহলের দাবি, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক পরিকল্পিত নাটক চলল হিংসাদীর্ণ মণিপুরে। গুটিকয়েক মহিলার বিক্ষোভকে তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা হল মণিপুরে মানুষ চায় না মুখ্যমন্ত্রী সরে যান। কিন্তু বাস্তব সত্যিটা এটাই যে, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের অকর্মণ্যতায় মণিপুর জ্বলছে, মানুষ মরছে।
গত রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। দীর্ঘদিন কেটে গেলেও কেন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে আলোচনাও হয়। জানা যায়, তার পরেই বীরেনের সামনে দু’টি বিকল্প রাখা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, বীরেনকে ইস্তফা দিতে হবে। তা না হলে কেন্দ্রের হাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। শাহের এই নির্দেশের পরও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তবে কি উত্তর-পূর্বের রাজ্যে রাশ আলগা হয়ে পড়েছে অমিত শাহের? নাহলে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং বিজেপির সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অমিত শাহের নির্দেশ অমান্য করছেন? তাই যদি হয় তাহলে মণিপুর তো বটেই লোকসভার আগে বিজেপির জন্যও তা যথেষ্ট উদ্বেগের। বীরেন সিংয়ের পদ আকড়ে থাকার লড়াইয়ের ফল ভুগতে হবে গোটা মণিপুরবাসীকে। যতদিন না সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়, এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুরোদমে সেনা মাঠে নামে।
এর পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলের তরফে আরও একটি দিক উঠে আসছে, তা হল দিল্লি বিজেপি ও মণিপুর বিজেপির পরিকল্পিত নাটক। শুরু থেকেই মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে গা ছাড়া ভাব ছিল অমিত শাহের। ধামা চাপা দিতে একাধিকবার শাহকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘মণিপুর স্বাভাবিক’। আর সেই সময় রাজ্যে রাজ্যে ভোটের প্রচার করে গিয়েছেন শাহ। আসলে পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হয়ে উঠুক ভোটকে নজরে রেখে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে রাজি নয় বিজেপি। আর এই ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে যাবে যদি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইস্তফা দেন। যার জেরেই পরিকল্পিত এই নাটক রচিত হল বিজেপি নেতৃত্বের যৌথ উদ্যোগে।