রাজ্যের আসন্ন নির্বাচন ও রাজনীতির হাজারও খবর মধ্যে বুধবার থেকে একটি খবরে সব সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছে- আর সেটা হল লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চান রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadev Bhattacharya) সন্তান সুচেতনা ভট্টাচার্য (Suchetana Bhattacharya)। সারাদিন এই নিয়ে যখন রাজ্যজুড়ে জোর জল্পনা। রাতে নিজেদের ফেসবুক পেজে সুচেতনকে স্বাগত জানিয়েও বুদ্ধদেবের আমলকে রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করলেন ভারতের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার অধ্যক্ষা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় (Manabi Banerjee)। জানালেন, কীভাবে সেই আমলে তাঁর ইনক্রিমেন্ট আটকে গিয়েছিল!
সম্প্রতি একটি ‘LGBTQ+’ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে লিঙ্গ পরিবর্তনের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন সুচেতনা। শুধু তাই নয়, তিনি চান এখন থেকে তাঁকে সবাই ‘সুচেতন ভট্টাচার্য’ বলেই চিনুক। তবে, একজন চল্লিশ উর্ধ্ব মানুষ হিসেবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই নিজের। এ বিষয়ে তাঁর বাবা-মাকে কেউ জড়াক সেটা চান না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সন্তান। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরের আর মনের একাত্ম হওয়ার ঘটনা আজকের দিনে নতুন কিছু নয়। সরকারি হাসপাতালেও এই পরিষেবা পাওয়া যায়। আজ থেকে বহু বছর আগে এই পরিবর্তনের মাধ্যমে সোমনাথ থেকে মানবী হয়ে উঠে ছিলেন উচ্চশিক্ষিত কলেজের অধ্যাপক। সেটা বাম আমল- প্রগতিশীল বলে যারা নিজেদের জাহির করে। কিন্তু সেখানেই একের পর এক বাধার মুখে পড়তে হয় মানবীকে। নিজের ভিডিও পোস্টে তিনি জানান, “বুদ্ধবাবুর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে আমার সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন সার্জারি হয় এবং শাস্তিস্বরূপ আমার পিএইচডি অগ্রাহ্য হয়! আমি রিডার পোস্ট থেকে বঞ্চিত হই এবং আমার প্রাপ্য দুটি ইনক্রিমেন্ট থেকে চিরতরে বঞ্চিত হই! যেটা অকারণ এক বিশাল আর্থিক ক্ষতি! ২০০৬ সালে আমি পি এইচ ডি অ্যাওয়ার্ডেড হয়েছিলাম! ২০০৩-০৪ সালে আমি লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী হই ! বুদ্ধবাবুর সরকার তা মেনে নেননি!” তিনি জানান, ”চাকরিস্থলে পুরুষ, এপিক কার্ডে নারী। আমাকে অর্ধনারীশ্বর করে রাখা হয়।” শুধু তাই নয়, পিএইচডি করার জন্যে যে ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য ছিল, তা তিনি কোনওদিনই পাননি।
পাশাপাশি, মানবী জানান কীভাবে প্রতি মুহূর্তে তাঁকে বোঝানো হত তিনি রূপান্তরকামী নারী। বাম আমলের মন্ত্রীদের প্রগতিশীলতা মুখোশ খুলে গিয়েছিল মানবীর বিষয়ে। তাঁকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন চক্রবর্তী এও বলেছিলেন, সোমনাথ তো মেয়েদের নামও হতে পারে! তিনি মানবী নাম স্বাক্ষর করায় বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন তাঁর মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর মানবী বাড়ির একমাত্র রোজগেরে।
তবে, সব শেষে ফের সুচেতনের সাহসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মানবী। তিনি জানানল, কীভাবে প্রতি নিয়ত একজন ট্রান্স নারী হিসেবে তাঁকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, হেনস্তার মুখে পড়তে হয়েছে। সুচেতনা যাতে সেই সব লড়াই পেরিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য শুভকামনা জানান বন্দ্যোপাধ্যায়।