‘সুচেতন’ হতে চান সুচেতনা! লড়াইয়ে সমর্থন আছে বাবা বুদ্ধদেবের

0
1

লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চান রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadev Bhattacharya) কন্যা সুচেতনা ভট্টাচার্য (Suchetana Bhattacharya)। সম্প্রতি একটি ‘LGBTQ+’ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে এই ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন সুচেতনা। শুধু তাই নয়, তিনি চান এখন থেকে তাঁকে সবাই ‘সুচেতন ভট্টাচার্য’ বলেই চিনুক। তবে, একজন চল্লিশ উর্ধ্ব মানুষ হিসেবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই নিজের। এ বিষয়ে তাঁর বাবা-মাকে কেউ জোড়াক সেটা চান না ‘বুদ্ধ-কন্যা’।

লিঙ্গ পরিবর্তন করে শরীরের আর মনের একাত্ম হওয়ার ঘটনা আজকের দিনে নতুন কিছু নয়। সরকারি হাসপাতালেও এই পরিষেবা পাওয়া যায়। তবে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যার এই সিদ্ধান্তে তুমুল আলোচনা হবে সেটা জানেন সচেতনা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ। মীরা ভট্টাচার্যের পেসমেকার বসেছে। সুতরাং এসবের মধ্যে তাঁদের কেউ টেনে আনুক সেটা চাইছেন না সুচেতনা। তিনি জানান, বিষয়টি তাঁর বাবার জানা। এতে তাঁর সমর্থনও আছে। সুচেতনা বলেন, ‘‘আমার বাবা-মায়ের পরিচয় বা পারিবারিক পরিচয়টা বড় কথা নয়। আমি এটা করছি আমার এই এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে। একজন ট্রান্সম্যান হিসেবে প্রতি দিন আমায় যে সামাজিক হেনস্থা হতে হয়, সেটা আমি বন্ধ করতে চাই। আমি প্রাপ্তবয়স্ক। আমার বয়স এখন ৪১ প্লাস। ফলে আমি আমার জীবন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি। এই সিদ্ধান্তও সেই ভাবেই নিচ্ছি। দয়া করে আমার বাবা-মাকে এর মধ্যে টেনে আনবেন না। এখন নিজেকে যিনি মানসিক ভাবে পুরুষ মনে করেন, তিনিও পুরুষ। যেমন আমি। আমি নিজেকে মানসিক ভাবে পুরুষ বলেই মনে করি। আমি এখন সেটা শারীরিক ভাবেও হতে চাই।’’

লিঙ্গ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় আইনি সহায়তার। সেই মতো আইনি পরামর্শও নিতে শুরু করেছেন সুচেতনা। প্রয়োজনীয় শংসাপত্রের জন্য যোগাযোগ করেছেন মনোবিদের সঙ্গে।

ওই কর্মশালায় যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে সুচেতনা লেখেন, ‘‘পিআরসি-র ৮০তম প্রতিষ্ঠা বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষে ১০ জুন, ২০২৩ অ্যাকশন টু হেল্থ অফ দ্য এলজিবিটিকিউ+কমিউনিটি ওয়ার্কশপে যোগদান করে আমি খুবই গর্বিত ও আনন্দিত। ওয়ার্কশপে প্রতিটি আলোচনার বিষয় সুচিন্তিত এবং প্রাসঙ্গিক। এলজিবিটিকিউ+ মানুষের অধিকার ও সমস্যা নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম, যা আমার মতো ট্রান্সম্যানকে সমৃদ্ধ করেছে, উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।’’ তথাকথিত সমাজের ‘মূলস্রোত’-এর চোখরাঙানি, উপহাস, ঘৃণা উপেক্ষা করে যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদের কুর্নিশ জানিয়েছেন সুচেতনা। এই ধরনের কর্মশালা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন পিআরসি-কে। বিবৃতিটির নীচে সুচেতনা লিখেছেন, ‘সুচেতন ভট্টাচার্য ওরফে (অ্যালিয়াস) সুচেতনা ভট্টাচার্য’।

একজন অত্যন্ত পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা হিসেবে সুচেতার এই সাহসী ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, যথেষ্ট মনের জোর এবং লড়াইয়ের মানসিকতা থাকলে তবেই এই ধরনের পদক্ষেপ করা যায়। সচেতনার মতো মানুষ পাশে থাকলে, তাঁদের সংগ্রাম কিছুটা মসৃণ হবে বলে মনে করছেন এলজিবিটিকিউ+ আন্দোলনকারীরা।