রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election) আসন্ন। ইতিমধ্যে ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। জোরকদমে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পালা। এমন আবহেই এবার সমস্ত জেলাশাসককে (District Magistrate) চিঠি দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State Election Commission)। চিঠিতে প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পিছনে আসল কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগেই এমন পদক্ষেপ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। যা কার্যত মনোনয়ন প্রত্যাহার রুখতে কমিশনের কড়া দাওয়াই বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, সোমবার বিকেলেই জেলাগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্যের একাধিক জায়গায় যেভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে তা নিয়েও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পেশের সময় বাড়ানো এবং কেন্দ্রীয়বাহিনীর (Central Force) নজরদারিতে নির্বাচনের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhiari)। একই ইস্যুতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও (Adhir Ranjan Choudhury)। সোমবারই পঞ্চায়েত নির্বাচনে সময় বৃদ্ধির পক্ষেই সায় দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এই প্রসঙ্গে কমিশন অবশ্য জানিয়েছে, মনোনয়নের সময় চাইলে একদিন বাড়ানো যেতে পারে। অর্থাৎ ৯ জুন থেকে ১৫ জুনের বদলে ১৬ জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে। এরপরই প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব, সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোট ১৪ জুলাই করা হোক।
অন্যদিকে রিটার্নিং অফিসার যদি মনোনয়ন প্রত্যাহারের সত্যতা নিয়ে সন্তুষ্ট ও নিশ্চিত না হন এই ততক্ষণ প্রত্যাহারের আবেদন গৃহীত হবে না। কমিশনের তরফে দেওয়া নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার নোটিস সংশ্লিষ্ট প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্দিষ্ট করা ইলেকশন এজেন্ট লিখিতভাবে আনবেন। প্রার্থীর তরফে ঠিক করা বা প্রার্থী যাকে অথরাইজড করছেন তারই দেওয়া নোটিস গ্রহণযোগ্য হবে। তবে শুধু নোটিস দিলেই হবে না, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার যথাযথ কি না, তা বিচার করতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলার ইলেকশন অফিসারদের। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার নিয়েও জেলাগুলিকে একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর পাশাপাশি প্রতিদিনের মনোনয়ন পর্ব নির্বিঘ্ন হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে। কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে কমিশনকে তা বিস্তারিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। কী ধরনের পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কতজন আহত হয়েছে বা নিহত হয়েছে , কোনও সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে কিনা, পুলিশের কেউ আহত হয়েছে কিনা সবই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা এদিন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানেই তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্টের মতে, ১৫ জুন থেকে ২১ জুন হোক মনোনয়ন পেশ। ২৩ জুন স্ক্রুটিনি এবং ২৬ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহার। পাশাপাশি দিনে ৪ ঘণ্টা মনোনয়ন জমা দেওয়ার পক্ষে পর্যাপ্ত নয় বলেই মন্তব্য হাই কোর্টের। প্রত্যুত্তরে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত মনোনয়নের সময় রাখা যেতে পার বলে জানাল কমিশন।