ভুল তথ্যে বিভ্রা.ন্তির চেষ্টা! দুর্ঘ.টনায় কাঠগড়ায় রেলের ‘অপদার্থতা’

0
1

স্বজনহারার হাহাকারে মৃত্যুপুরী বালেশ্বর (Balasore)। কেউ যাচ্ছিলেন কর্ম গন্তব্যের দিকে, কেউ ফিরছিলেন বাড়ির পথে। মাত্র ২৩ সেকেন্ডের ধ্বংসলীলায় সব শেষ। এটা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, শতকের অন্যতম ভয়ঙ্কর রেল বিপর্যয় (Rail Accident)। বালেশ্বরের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহতদের সংখ্যাটা ৯০০ ছাড়িয়েছে। এখনও উদ্ধার হচ্ছে দেহ, অথচ গতকাল রাতেই রেলের তরফ থেকে দায়সারা মনোভাব প্রকাশ্যে এল। তদন্ত কমিটি গঠন করার আগেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালকের উপর দোষ চাপালো ভারতীয় রেল। নিজেদের অপদার্থটা ঢাকতে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা রেলের?

কী ভাবে ঘটলো দুর্ঘটনা?

একটি মালগাড়ি ও দুটি এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ। হাওড়া-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express), যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি – তিনটি ট্রেন এই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। কিন্তু কী করে এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করে রেখেছে রেল।

যুক্তি ১ : ডাউন হাওড়াগামী যশবন্তপুর-হাওড়া হামসফর এক্সপ্রেসের (Humsafar Express) চারটে কম্পার্টমেন্ট লাইনচ্যুত হয়েছিল। সেই সময় আপ করমণ্ডল দ্রুত গতিতে সেখানে পৌঁছতেই ধাক্কা লাগে। এর ফলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন উঠে যায় পাশের রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির মাথায়।

যুক্তি ২ : আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস হয় মালগাড়ির পেছনে ধাক্কা মারে, নয়তো লাইনচ্যুত হয়ে ইঞ্জিন উঠে পড়ে পাশে দাঁড়ানো মালগাড়ির উপর। ততক্ষণে পাশের লাইন দিয়ে পার হচ্ছে ডাউন যশবন্তপুর-হাওড়া হামসফর এক্সপ্রেস। ঠিক তখনই করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে করমণ্ডলের বাকি কামরাগুলি বেলাইন হয়ে ডাউন হাওড়াগামী যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসের শেষ পাঁচ ছয়টি কামরার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

যুক্তি ৩ : দিল্লিতে রেলের সদর দফতর থেকে বলা হচ্ছে শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের দিকে রওনা দিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ওড়িশার বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে যখন ট্রেনটি পৌঁছয় সেই সময় উল্টো দিক থেকে আসছিল যশবন্তপুর-হাওড়া হামসফর এক্সপ্রেস। সুপারফাস্ট করমণ্ডল এক্সপ্রেস প্রায় ১২৮ কিলোমিটার গতিতে যাচ্ছিল যদিও হামসফর এক্সপ্রেসের গতি খুব বেশি ছিল না বলেই রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে। দুটি ট্রেন পাশাপাশি একে অপরকে অতিক্রম করার সময়, কোনও ভাবে যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় এবং ধাক্কা মারে করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে। প্রচন্ড গতিবেগে চলতে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেস পাশের ট্রেনের ধাক্কায় লাইন থেকে ছিটকে যায় । লুপ ট্র্যাকে ছিল আরেকটি মালগাড়ি। সেই মালগাড়িটিকে আবার ধাক্কা মারে লাইনচ্যুত করমণ্ডল এক্সপ্রেস।এর ফলে মালগাড়িটির উপরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন উঠে যায়।

এবার প্রশ্ন কোনটা আসল তথ্য? যদি হামসফর এক্সপ্রেস আগে থেকে লাইনচ্যুত হয়ে থাকে, তাহলে সেই বার্তা করমন্ডল এক্সপ্রেসের চালকের কাছে পৌঁছল না কেন? শুক্রবার থেকে বারবার রেল সাফাই দিচ্ছে আর বলে চলেছে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা এখন দুর্ঘটনা আটকাতে সক্ষম। যদি তাই হবে তাহলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কাছে কেন কোনও সিগন্যাল পৌঁছল না, যে তার যাত্রা পথের লাইনের উপর আগে থেকেই একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে রয়েছে। তাহলে তো অনেক আগেই সেই ট্রেনটিকে পূর্ববর্তী স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া যায়। যদি সেটা না হয় অর্থাৎ একই সময় যদি দুটি গতিশীল ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়ে থাকে, তাহলে যে ‘কবজ’ স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা পদ্ধতির কথা দক্ষিণ ভারতীয় রেলের তলকে বলা হয়েছিল, তার কার্যকরী প্রয়োগ দেখা গেল না কেন? আরও একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তাহলে কি হাই স্পিড ট্রেন চালু করলেও সেই ট্রেনের উপযুক্ত ট্র্যাকের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গাফিলতি রয়েছে রেলের?

শনিবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে, অথচ শুক্রবার রাতেই বলে দেওয়া হল যে চালকের গাফিলতির জেরে এই দুর্ঘটনা। রেলের উন্নতির নাম করে মান্থলি থেকে শুরু করে টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হল। বয়স্কদের ছাড় তুলে দেওয়ার মতো জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হল । কিন্তু আসলে যে রেলের কঙ্কালসার চেহারাটা সবার সামনে চলে আসছে সেটা বুঝতে পারছেন আমজনতা। চূড়ান্ত অপদার্থতা আর গাফিলতির জেরে আজ এতগুলো মানুষের জীবন-নিমেষের শেষ হয়ে গেল। শতকের ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনার তালিকায় শীর্ষে চলে এল বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা। সন্ধ্যা থেকে রাত, রাত পেরিয়ে সকাল, সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল- এখনও একের পর এক লাশ উদ্ধার হয়ে চলেছে। যাত্রী সুরক্ষায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে রেল তবুও কেন সতর্ক নয়? আর কত রক্ত দেখার পর হুঁশ ফিরবে কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থা ভারতীয় রেলের(Indian railways)?