জনজাতিদের সং.ঘর্ষে অ.শান্ত মণিপুর! রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি কংগ্রেসের, স্থগিত নিট পরীক্ষা

0
2

জনজাতিদের উগ্র সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে মণিপুর (Manipur)। উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্যটির পরিস্থিতি নিয়ে দেশবাসীর মনে বইছে আতঙ্কের চোরাস্রোত। বুধবার থেকে চলতে থাকা হিংসায় ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৫৪ জন মারা গিয়েছেন মণিপুরে। সেনা-আধা সেনা নামিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তবে রবিবার কিছু সময়ের জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়েছে চূড়াচাঁদপুরে। অন্যদিকে, ইম্ফলে (Imphal) পড়তে যাওয়া ছাত্ররা ফিরতে শুরু করেছেন আগরতলায় (Agartala)। তবে এখনও পর্যন্ত বহু জায়গায় জারি রয়েছে কারফিউ (Carfew)। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি শাসিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যতে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানালেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর (Shashi Tharoor)।

এদিন টুইটারে শশী লেখেন, মণিপুরে যেভাবে হিংসা চলছে তাতে যে কোনও সঠিক চিন্তার মানুষ প্রশ্ন তুলবেন সেই সুশাসন কোথায় যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে বিজেপিকে ফেরানোর এক বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় মণিপুরের ভোটাররা নিজেদের প্রতারিত ভাবতেই পারেন। এটাই রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সময়। রাজ্য সরকার তাদের কাজ করতে ব্যর্থ, যে জন্য তাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল। আর কংগ্রেস নেতার এমন মন্তব্যের পর বেশ বিপাকে পড়েছে গেরুয়া শিবির।

অন্যদিকে, শনিবারই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ (N Biren Singh) একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। আর সেই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, রবিবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চূড়াচাঁদপুরে কারফিউ সাময়িক ভাবে তোলা হয়েছে। সেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল হয়েছে বলেই প্রশাসনের দাবি। ড্রোনের (Drone) মাধ্যমে পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে, রবিবার হতে চলা নিট ইউজি (NEET) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এদিন সারা দেশে এই পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু, পরিস্থিতি থমথমে থাকায় ও কার্ফু চলায় মণিপুরে এই পরীক্ষা আপাতত বন্ধ। পরবর্তী দিন ঘোষণা করবে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। অগ্নিগর্ভ মণিপুর থেকে বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা ও পড়ুয়াদের উদ্ধারকাজ চলছে জোরকদমে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা নিজে উদ্ধারকাজ তদারকি করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮৩ জন ছাত্রকে বিমানে মণিপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মণিপুরে অশান্তির আবহ। মেটেই জনজাতির সঙ্গে আদিবাসীদের সংঘাতের জেরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মণিপুরের মেটেই জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির তকমা দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। মণিপুরের বিজেপি সরকার সেই দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাতেই ক্ষুব্ধ কুকি-সহ অধিকাংশ আদিবাসী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মেটেইরাও যদি তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করতে সর্বদল বৈঠকের ডাক দিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও সেনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। গত ৩ এপ্রিল থেকে অশান্ত মণিপুর। একের পর এক বাড়িতে আগুন , গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে অবশ্য মণিপুরের পরিস্থিতি কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছিল। সেনাবাহিনী এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে ফ্ল্যাগ মার্চ করে। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য নিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার আপাতভাবে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও শনিবার থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুরের ইম্ফল এবং চূড়াচন্দ্রপুর। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ভুয়ো ভিডিও ছড়ানোয় অশান্তি বাড়ছে।

ইতিমধ্যে হিংসার ঘটনায় প্রায় ৯ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। ৭ হাজার জনকে সেনাবাহিনী নিরাপদে স্থানে ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এদিকে শনিবার থেকে ফের নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মণিপুরে। আতঙ্কে পড়ুয়ারা মণিপুর ছেড়ে পালাচ্ছেন। ইম্ফল থেকে আগরতলায় পালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, এদিন চূড়াচন্দ্রপুরে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়েছিল। যাতে পড়ুয়ারা বাড়ি ফিরতে পারেন। তবে মায়ানমার সীমান্তে অশান্তি আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করে চপারে নজরদারি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে বাংলার আটকে পড়া মানুষদের ফিরিয়ে আনতে হেল্পলাইন নম্বর চালু করে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি মণিপুরে আটকে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদে রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে নাগাল্যান্ড সরকার ২২টি বাসের ব্যবস্থা করেছে। মণিপুরে যাঁরা কর্মসূত্রে গিয়েছেন নাগাল্যান্ড থেকে তাঁদের এবং পড়ুয়াদের এই বাসে করে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে নাগাল্যান্ড সরকার। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও মণিপুরে আটকে থাকা পড়ুয়াদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। মণিপুরে পড়তে যাওয়া ছাত্রদের বিশেষ বিমানে আগরতলায় নিয়ে এসেছে ত্রিপুরা সরকার। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাজস্থান সরকারও। সেখানে আটকে থাকা পড়ুয়াদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।