সিংভি তৃণমূলের সমর্থনে কংগ্রেস সাংসদ, বিরোধিতা করেছিল সিপিএম! ন্যাড়া কৌস্তভ সেটা জানেন?

0
1

সোমনাথ বিশ্বাস:“অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর”, বাংলায় একটা বহুল প্রচারিত প্রবাদ। এ রাজ্যে সাইন বোর্ড হয়ে যাওয়া কংগ্রেসের এক চারআনার নেতার আবভাব এখন সেটাই। গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো অবস্থা। নাম তার কৌস্তভ বাগচী। নিজের ক্ষোভ ও আপত্তির কথা জানিয়ে এই বাগচী সুপ্রিম কোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবী তথা পশ্চিমবঙ্গ থেকে মনোনীত কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনুসিঙ্ঘভিকে ইমেল মারফত “পত্রাঘাত” করেছেন।

কিন্তু কেন এই চিঠি? কৌস্তভের দাবি, কংগ্রেস নেতা হয়েও সিঙ্ঘভির এই কাজে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা লজ্জিত। রবিবার সকালে সিঙ্ঘভিকে পাঠানো ইমেলে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি এই চিঠিটি পশ্চিমবঙ্গের একজন কংগ্রেস কর্মী ও নেতা হিসেবে আপনাকে লিখছি। একজন প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে আপনার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে কার হয়ে আপনি আদালতে সওয়াল করবেন বা আপনার মক্কেল কারা হবেন তা নির্বাচন করার। কিন্তু কংগ্রেস পার্টির একজন প্রবীণ নেতা হিসেবে আপনি সেই দলের কর্মী ও নেতাদের দায়বদ্ধতাকে কখনওই অগ্রাহ্য করতে পারেন না।’’ কৌস্তভ আরও লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা নিরলস ভাবে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু আপনি আদালতে শাসক পক্ষের হয়ে সওয়াল করায় আমাদের লড়াই অর্থহীন হয়ে পড়ছে।’’ যদিও এর কোনও উত্তর রবিবার দুপুর পর্যন্ত কৌস্তভের কাছে আসেনি। এবং আসবে বলেও মনে হয় না। কারণ, এইসব চুনোপুঁটিদের পাত্তাই দেন না সিংভির মতো আইনজীবী। চেনেন বলেও।মনে হয় না!

এই মাসখানেক আগে ডোরিনা ক্রসিংয়ে দেখছিলেন চার-আনার কংগ্রেস নেতা ন্যাড়া হয়ে ঘুরছে। কোনও একটি ইস্যুতে মানব-শৃঙ্খলা করবেন। সেখানে ৫০জন পুলিশ। আর এই কর্মসূচিতে কৌস্তভকে নিয়ে মোট পাঁচজন কংগ্রেস নেতা। বাপরে বাপ, তার আবার এতো কথা।

ইতিহাস-ভূগোল না জানা চার-আনার কৌস্তভ কী জানেন, বাংলা থেকে রাজ্যসভায় পা রাখা কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনুসিংভি তৃণমূলের সমর্থনে সাংসদ হয়েছেন? তাহলে জেনে রাখুন কৌস্তভ, ২০১৮ সালে বিধায়ক সংখ্যার বিচারে রাজ্যসভার চারটি আসন শাসক দল তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। জল্পনা ছিল পঞ্চম আসন নিয়ে।
সেই পঞ্চম আসনে কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভিকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সে বছর নজরুল মঞ্চে কোর কমিটির সভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের চার রাজ্যসভা প্রার্থীর নাম ঘোষণার সময়ই পঞ্চম আসনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানান তৃণমূল নেত্রী। রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সদস্য সিংভি জাতীয় রাজনীতিতে তখন পরিচিত মুখ। দীর্ঘ সময় ধরেই কংগ্রেসের মুখপাত্রের দায়িত্বে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের প্রথমসারির আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম সিংভি। এ হেন প্রার্থীকে জেতাতে তৃণমূল সু্প্রিমো কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিলেন।

সেই সময় অভিষেক মনু সিংভিকে সমর্থন প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বৃহত্তর স্বার্থেই অভিষেক মনু সিংভিকে সমর্থন করব আমরা। পঞ্চম আসনে আমরা লড়ব না।” সেবার তৃণমূলের তরফে প্রার্থী রাজ্যসভায় পাঠানো হয় ডাক্তার শান্তনু সেন, নাদিমুল হক, শুভাশিস চক্রবর্তী এবং আবির বিশ্বাসকে। সেইসঙ্গে পঞ্চম আসনে সমর্থন করা হয় কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিংভিকে।অভিষেক মনু সিংভিকে যখন বাংলা থেকে তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভায় যান, তখন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন রাহুল গান্ধী এবং প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী।

অথচ, অভিষেক মনু সিংভিকে হারানোর জন্য বামফ্রন্টের তরফেও পঞ্চম আসনে প্রার্থী হিসেবে রবীন দেবের নাম ঘোষণা করা হয়। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে প্রার্থী নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। কিন্তু, দিল্লি থেকে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বামেরাও প্রার্থী দেবে। তাই রবীন দেবকে প্রার্থী করা হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ তৃণমূলের ১৭ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়ে বাংলা থেকে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন অভিষেক মনু সিংভি। এখনও একবছর মেয়াদ রয়েছে তাঁর।

এদিকে সম্প্রতি, রাধিকাপুরে কংগ্রেস কর্মীদের হাতে চড়-থাপ্পড় খাওয়া চার-আনার মুন্ডিতমস্তক নেতা কৌস্তভের কাছে একটি প্রশ্ন, আপনাদের জোটসঙ্গী সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দলবদলু বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই ”দুর্নীতিবাজ” সৌমেন্দুর হয়ে অনেক মামলাতেই আদালতে সওয়াল করেন! এক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন কৌস্তভবাবু?

আরও পড়ুন:যোগী পুলিশের কীর্তি , কোমরে দড়ি বাঁধা বিচারাধীন বন্দি দিব্যি মদ কিনল!