দেশজুড়ে সাধারন মানুষের সমস্যা বাড়ছে, গ্যাসের দাম আকাশ ছোঁয়া, পরিশ্রমের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছে না রাজ্যগুলো, আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি, নাগরিক সুবিধা থেকে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে – অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে এসে নিজের পিঠ নিজেই চাপড়ালেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) শততম ‘মন কি বাত’ (Mann ki Baat) অনুষ্ঠান ঘিরে বিজেপি তরফ থেকে তুমুল উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। রবিবার সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় বলা হয় প্রধানমন্ত্রী নাকি কথা বলবেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে। অথচ শততম অনুষ্ঠানে নিজের পাবলিসিটি ছাড়া আর অন্য কিছু করতে শোনা গেল না নরেন্দ্র মোদিকে(Narendra Modi), এমনটাই মত বিরোধীদের। মেয়েদের উন্নতির কথা বলে কি নারী নির্যাতনের ঘটনায় শীর্ষে থাকা উত্তরপ্রদেশকে বাঁচাতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী? দেশের বিভিন্ন স্তরে উন্নতির কথা বলতে গিয়ে একবারও বাংলার নাম মুখে আনলেন না প্রধানমন্ত্রী। বাংলার কন্যাশ্রী (Kannyashree) বিশ্বের বুকে প্রশংসিত অথচ সেই কথা একবারও শোনা গেল না নরেন্দ্র মোদির বচনে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন, সেখানকার মানুষের সঙ্গেও তো কথা বললেন না মোদি।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর অরাজনৈতিক শততম পর্ব রবিবার সকাল ১১টায় সম্প্রচার হতে শুরু করে। জানা গেছিল ভারতের ১৬ টি জায়গার মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন নরেন্দ্র মোদি। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নন্দীগ্রামকে নির্বাচন করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছিল। এর পাশাপাশি দেশের ১৩টি স্থানে প্রজেকশন ম্যাপিং এবং শব্দ ও আলোর মাধ্যমে এর গুরুত্ব দেখানোর কথাও ছিল। সেই মতোই আবেগঘন গলায় বক্তব্য রাখতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শুরুর আগে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলেন, “সকলে সকাল ১১টায় মন কি বাত অনুষ্ঠান শুনবেন। এটা সত্যিই একটা বিশেষ যাত্রা ছিল। আমরা এই অনুষ্ঠানে ভারতের জনগণের সম্মিলিত চেতনা উদযাপন করেছি।” রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরেও সরাসরি সম্প্রচারিত হয় মন কি বাত অনুষ্ঠান। মন কি বাতের মাধ্যমে অনেক গণআন্দোলনেরও জন্ম হয়েছে বলে এদিন উল্লেখ করেন মোদি। পাশাপাশি বিদেশে যাওয়ার আগে নিজের দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখার অনুরোধ করেন দেশবাসীকে। নরেন্দ্র মোদি এদিন বলেন নিজের রাজ্যের বাইরে গিয়ে অন্যান্য রাজ্য ঘুরে বেরিয়ে ভারতের শিক্ষা সংস্কৃতিকে বুঝতে হবে। পর্যটনে ল্যান্ড তৈরি করতে পারবে ভারত। হরিয়ানা থেকে শুরু করে ঝাড়খন্ড, বিশেষ বিশেষ প্রতিনিধিদের কথাই এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। একদিকে মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার কথা বলার পাশাপাশি স্বচ্ছ ভারতের জয়গান করতে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। দেশের আসল সমস্যার দিক থেকে সাধারণ মানুষের চোখ ঘোরাতে নিজের পাবলিসিটি করা কাকে বলে সেটাই বোঝালেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। বাংলা নিয়ে একটা শব্দও খরচ করলেন না তিনি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পকে নকল করে নরেন্দ্র মোদির ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প। সেই প্রকল্পের গুণগান করেছেন মোদি, কিন্তু কন্যাশ্রী যে আজ বিশ্ববন্দিত সেই প্রসঙ্গে একটা কথাও বলেননি। শততম এপিসোডে নরেন্দ্র মোদি বলেন ” জনতা আমার কাছে ঈশ্বর”। পাশাপাশি মন কি বাত তাঁর কাছে আধ্যাত্মিক যাত্রা বলেও এদিন উল্লেখ করেন মোদি। অথচ যেভাবে নরেন্দ্র মোদির সরকারের আসল ছবিটা সবার সামনে তুলে ধরে দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিরোধীদলের নেতা নেতৃত্বরা কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সি দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন , সেই প্রসঙ্গকে আড়াল করে আবেগের মরু কে দেশবাসীর ফোকাস ঘোরানোই যে শততম মন কি বাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল , সেটা সকলের কাছে আবার স্পষ্ট হয়ে গেল।