হাওয়া’র গান বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন নির্মাতা; সাম্মানিক পাবেন মনিরুদ্দিন

0
1

খায়রুল আলম,ঢাকা: বাংলাদেশ এবং ওপার বাংলা এই দুয়ে মিলিয়ে বাংলা সিনেমায় সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম ‘হাওয়া’। গত বছরের জুলাইয়ে মুক্তি পাওয়া ছবিটি দেশজুড়ে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। সমালোচনা-প্রশংসার জোয়ারে ভেসে এই ছবি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ভারতেও ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল।
আর এই ‘হাওয়া’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে দুটি গান। দুটিই পেয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। এর মধ্যে একটি হলো ‘আটটা বাজে দেরি করিস না’। ইমন চৌধুরীর সংগীতায়োজনে গানটিতে কণ্ঠ দেন বাসুদেব দাস বাউল। কিন্তু এর গীতিকার-সুরকারের নামের স্থলে রয়েছে ‘সংগৃহীত’ শব্দটি।
পরিচয়হীন সেই গানের স্রষ্টাকে খুঁজে পাওয়া গেছে অবশেষে। সম্প্রতি কলকাতার গণমাধ্যমে তার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তিনি মনিরুদ্দিন আহমেদ। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ি লালকুঠি গ্রামের বাসিন্দা।
১৯৮৬ সালে একটি ক্যাসেটে তার এই গান প্রকাশও হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে এটি বাউল গান হিসেবে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু হারিয়ে যায় প্রকৃত রচয়িতার নাম।
বিষয়টি নিয়ে কলকাতার একাধিক গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাই ‘হাওয়া’র নির্মাতার কাছে পুরো ঘটনার জানতে চাইলে নির্মাতা সুমন জানান, সিনেমা মুক্তির আগ থেকেই তারা চেষ্টা করেছেন গানটির প্রকৃত রচয়িতাকে খোঁজার। না পেয়ে অগত্যা ‘সংগৃহীত’র আশ্রয় নেন।
কলকাতার মিডিয়ায় জানার পর ইতিমধ্যে মনিরুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সুমন। দ্রুত এর সংশোধনও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুমনের বক্তব্য, “ইউটিউবে আপলোড হওয়া ভিডিওতে সেভাবে সংশোধন তো করা যায় না। আমরা আলাদা একটা স্লট বানিয়ে পোস্ট করবো এবং ‘হাওয়া’র পেজ থেকেও পোস্ট করা হবে। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা থাকবে যে, অনেক দিন ধরে এই গানের রচয়িতাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। অবশেষে ভারতের সংবাদ মাধ্যম থেকে তার খোঁজ পেয়েছি।”

সুমন বললেন, ‘ইতিমধ্যে ২৬ এপ্রিল বিকালেই গীতিকার-সুরকার ও তার ছেলের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এই গানটা যে তার, এটা কেউ জানতো না। বিষয়টা তিনি নিজেও জানেন। তিনি খুব নিভৃতে থাকেন। আগে পঞ্চায়েতের একটা চাকরি করতেন, এখন অবসরে। বিভিন্ন সময় তিনি গান রচনা করেছেন। সেগুলো অনেকেই গায়।
কিন্তু তার পরিচিতি অধিকাংশেরই অজানা। আসলে বাউল বা লোকজ গানগুলো তো মুখে মুখেই প্রচলিত হয়। এগুলোর লিখিত ফরম্যাট খুব কমই থাকে। সে কারণে এগুলোর সঠিক উৎস খুঁজে পাওয়াও কঠিন।’

গীতিকবি-সুরকার মনিরুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গে যাবেন মেজবাউর রহমান সুমন। গানটির জন্য তাকে প্রাপ্য সাম্মানিকও দেবেন বলে নিশ্চিত করলেন এই নির্মাতা।

গানটি কীভাবে খুঁজে পেয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুমন বলেন, “আমি সবসময়ই বিভিন্ন বাউলের গান শুনতে থাকি। বাউল-লোকগান সংগ্রহও করি। এই গান ২০১৬ সালের দিকে আমি বাসুদেব বাউলের কণ্ঠে প্রথম শুনেছিলাম।
২০১৭ সালে যখন ‘হাওয়া’র চিত্রনাট্যের কাজ করছিলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিই যে, গানটি ছবিতে রাখবো। আমরা ভেবেছিলাম এটি বাসুদেব বাউলের গান। ২০১৭ সালেই আমরা শান্তিনিকেতনে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি জানান যে, এটা অন্য কারও গান। তবে কার, সেটা জানেন না।
এরপর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছি প্রকৃত রচয়িতাকে খোঁজার। কিন্তু কারও কাছে তথ্য পাইনি। তাই ‘সংগৃহীত’ হিসেবেই গানটি ব্যবহার করি। কারণ এই ধরনের গানের ক্ষেত্রে রচয়িতার নাম-পরিচয় না পাওয়া গেলে ‘সংগৃহীত’ই লেখা হয়।”

ইউটিউবে ‘আটটা বাজে দেরি করিস না’ গানটিতে শুধু ‘হাওয়া’ ছবির চ্যানেলেই ২৬ মিলিয়নের বেশি ভিউ রয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে বিভিন্ন চ্যানেল-পেজে গানটির ভিউ অগণিত।