শুনানির অধিকার হারিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: সুপ্রিম কোর্ট! এটাই তো বলে আসছিলাম: কুণাল

0
1

দেশের শীর্ষ আদালতে চরম অস্বস্তির মুখে পড়লেন
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। বিচারাধীন মামলা নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে খুল্লামখুল্লা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এবার তা নিয়েই কলকাতা হাই কোর্টের কাছে হলফনামা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। আজ, সোমবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনুসিঙ্ঘভির সওয়ালের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এই নির্দেশ দেন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আগামী শুক্রবারের মধ্যে হলফনামা চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই দিনই এ মামলার পরবর্তী শুনানি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, “কোনও বিচারপতিবিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। তেমন হলে তিনি মামলার শুনানি করবেন না।” সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, “যদি বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেক্ষেত্রে তিনি ওই মামলার শুনানি করার অধিকার হারিয়েছেন। সেই ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ওই মামলার শুনানির জন্য নতুন বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে।”

এদিকে, সোমবার দু’টি টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সেখানেই তিনি লেখেন, ‘‘বিচারপতি গাঙ্গুলি কি টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন? দিয়ে থাকলে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের মত আচরণ করেছেন। বলল সুপ্রিম কোর্ট। রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে। এর সঙ্গে আরও কড়া মন্তব্য করেছে সর্বোচ্চ আদালত। এই কথাই তো সবিনয়ে বলে আসছিলাম এতদিন।’’

অন্য একটি টুইটে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে কুণাল লিখেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের আজকের বক্তব্যের পর বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের উচিত বিচারব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে সরাসরি রাজনীতি করা। বিচার চালানোর কোনো নৈতিক অধিকার তাঁর নেই।’’

প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে যখন সরগরম বাংলা, তখনই তাঁরই বেঞ্চের বিচারাধীন মামলাগুলি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে একটি বেসরকারি বৈদ্যুতীন সংবাদমাধ্যমকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছিলেন। নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গ সহ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও নানা কথা বলেছিলেন তিনি। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। কীভাবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিভি সাক্ষাৎকার দিলেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। সরব হয় তৃণমূল। সেই সময়ও কুণাল ঘোষ দাবি করেন, ”মহামান্য বিচারপতি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি কিন্তু তাঁর চেয়ারের অপব্যবহার করছেন। ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য রাজনৈতিক দলের ক্যাডারে পরিণত হয়ে গিয়েছেন।’’

উল্লেখ্য, এর আগে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিভি সাক্ষাৎকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি। সেই আবেদনের ভিত্তিতেও কলকাতা হাইকোর্ট থেকে রিপোর্ট চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াউই চন্দ্রচূড়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কোনও টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিনা তা হলফনামা হিসাবে শুক্রবারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে পেশ করতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে।