আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঠিক ১৫০ বছর আগে, ১৮৭৩ সালের এই দিনে শহরের বুকে গড়িয়েছিল ভারতের প্রথম ট্রামগাড়ি । যদিও সেই ট্রাম যাত্রী পরিবহনের জন্য নয়, ছিল পণ্য পরিবহণের জন্য।বিপুল লোকসান ও অন্যান্য অসুবিধায় মাত্র ন’মাসের মধ্যে সেই পণ্য-পরিবাহী ট্রাম বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।
এই ১৫০ বছর পূর্তিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি শহরে হবে ট্রাম প্যারেড। শহরজুড়ে ঘুরবে। গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এই ট্রাম প্যারেডের আয়োজন করেছে ‘ট্রাম যাত্রা’ নামে ট্রামপ্রেমী একটি সংগঠন।আজ ট্রামের দেড়শোতম জন্মদিনে ধর্মতলায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ধর্মতলার ওই অনুষ্ঠানে কলকাতার ট্রামের ওপরে একটি থিম সং প্রকাশ করবেন গায়ক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত।
রাজ্য পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি হেরিটেজ রুটে ট্রাম চালানো হবে।এরই পাশাপাশি, এসপ্ল্যানেড থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রুটটি ফের চালু হতে পারে। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া, কফি হাউজ, স্বামী বিবেকানন্দর বাড়ি, বিধান সরণী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাড়ি সহ কয়েকটি জায়গাকে ছুঁয়ে যাবে এই রুট। ইতিমধ্যেই এই রুটের ট্রামের ট্রায়াল রান হয়েছে। এছাড়াও একটি হেরিটেজ রুট চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি রুট শীঘ্রই শুরু করা হবে।
বাসে, ট্রামে যে ‘লেডিস সিট’ বা মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা আমরা দেখি, আজ থেকে প্রায় ১১৫ বছর আগে প্রথম তা চালু করা হয়েছিল ট্রামেই।
এখনও কলকাতার যে সামান্য কয়েকটি রাস্তায় যাত্রীবাহী ট্রামগাড়ি চলে, তার পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৮৮০ সালের ১ নভেম্বর। সেইসময় হাওড়া ও শিয়ালদহে ট্রেনে যে মালপত্র আসত, সেগুলো দেশের অন্যান্য জায়গায় পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হত ট্রাম। শিয়ালদহ স্টেশনে আসা জিনিসপত্র ট্রামপথে আর্মেনিয়ান ঘাট অবধি নিয়ে যাওয়া হত। সেখান থেকে কাঠের সেতু পার হয়ে হাওড়া স্টেশনে সেই জিনিসপত্র নিয়ে আসা হত।তারপর ট্রেনে করে সেই সব জিনিসপত্র দেশের অন্যান্য জায়গায় পাঠানো হত।
জানেন কী, ভারতে প্রথম পণ্যবাহী ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। পরে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় এবং হাওড়ায় ট্রাম চলাচল শুরু হয়। কিন্তু, প্রথম দিন থেকেই সেই ট্রামে জিনিসপত্রের বদলে সাধারণ মানুষই উঠতো বেশি। প্রথম যুগে ছিল ঘোড়ায় টানা ট্রাম। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্যত্র। জনবহুল পথে ট্রামের ঘোড়া মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে যেত। ফলে তাদের উলটো পালটা দৌড়াদৌড়িতে গাড়ি লাইনচ্যূত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটত মাঝে মাঝে।
এরপর অল্প কিছুদিন স্টিম ইঞ্জিন দিয়ে ট্রাম চালানো হলেও ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ থেকে খিদিরপুর ট্রাম লাইনে বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানো শুরু হয়। পরে কলকাতার সব ট্রামই বিদ্যুৎচালিত হয়ে যায়। কিন্তু, ক্যালকাটা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কপোর্রেশনের পক্ষে অত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে ট্রাম কোম্পানি নোনাপুকুর ট্রামডিপোয় একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর বসায়।
একটা সময়ে সারা কলকাতা জুড়ে প্রায় ৪৯ মাইল বা তার বেশি ট্রামপথ ছিল। এখন তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার পর হয়ত একদিন সারা দেশের কোথাও আর ট্রামপথ থাকবে না। শুধু রাতের নয়, কলকাতার ‘শেষ ট্রাম’ও বোধ হয় এবার মুছে যেতে চলেছে এই শহরের বুক থেকে।