কোনও ইস্যু ছাড়াই দলীয় কর্মীদের শুধু জমায়েতের নোটিশ। গোপন উদ্দেশ্য ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি। কিন্তু গোপন কথা গোপন থাকেনি। পুলিশ থেকে সংবাদ মাধ্যম সকলেই বিষয়টি আঁচ করতে পারে। আগে থেকেই দক্ষিণ কলকাতার যদুবাবুর বাজার থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী রেখেছিল পুলিশ। যাতে একটি মাছি পর্যন্ত গলতে না পারে। পেশার তাগিদে হাজির ছিলেন কমপক্ষে ৫০জন সংবাদ কর্মী। কিন্তু “তোমার দেখা নাইরে তোমার দেখা নাই…”! মেরেকেটে ৫ থেকে ৭জন বিজেপি কর্মীকে দেখা যায় জমায়েত স্থলে। অনুমতি না থাকায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আটক করে গাড়িতে তোলে তাঁদের। ব্যস, বঙ্গ বিজেপির নির্বিষ আন্দোলনের শুরু কিংবা শেষ সেখানেই।
সুপার ফ্লপ অভিষেকের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি।
এই ঘটনা প্রমাণ করে তলানিতে বাংলায় গেরুয়া শিবিরের সংগঠন। আদি-নব্য লড়াইয়ে এমনিতেই উত্তাল গেরুয়া শিবির। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে নয়া কৌশল নিয়েছিল রাজ্য বিজেপির। কিন্তু সে গুড়ে বালি। মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবন ঘেরাওয়ের অপচেষ্টায় মুখ থুবড়ে পড়ল গেরুয়া শিবির।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আগেই লোকদেখানো হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, যেনতেন প্রকারেণ মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ায় যেতে চাইছিল বিজেপি। অভিষেকের বাড়ি থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে দক্ষিণ কলকাতার যদুবাবু বাজার চত্বরে মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। আর এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে অতিসন্তর্পনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাও করতে তৎপর ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরা। কিন্তু রাজ্যের সর্বোচ্চ নেতার আহ্বানে সাড়া দিলেন ন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা।
সম্প্রতি, “রাজবংশী মেরে, রাজবংশী প্রেম”, স্লোগান দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। গত ডিসেম্বরে কোচবিহারে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে রাজবংশী যুবক প্রেমকুমার বর্মনের। তাঁর দেহে ১৮০টি গুলি মিলেছিল বলে খবর। এই নৃশসংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামানিকের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোধ্যায়। কোচবিহারে তৃণমূলের সেই কর্মসূচি সফল। তবে এর পাল্টা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ার দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যে কর্মসূচি নিয়েছিলেন তা চূড়ান্ত ব্যর্থ।
অথচ, অভিষেকের বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি সফল করতেদলীয় কর্মীদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে বঙ্গ বিজেপির তরফে। এদিন সকালে উত্তর কলকাতার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দলের সদর দফতর মুরলীধর সেন লেনে জমায়েতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে মিছিল করা হবে।
জরুরি সূচনা জারি করে দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির তরফেও বার্তা দেওয়া হয়েছিল। নোটিশে লেখা ছিল, “সকল কার্যকরতা ,মন্ডল ও মোর্চা সভাপতিগণকে জানানো হচ্ছে যে আগামী কাল (21/02/2023) দুপুর 1۔30 PM, নেতাজী ভবন যদুবাবুর বাজার এর সামনে একটি জমায়েত ও প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে ۔۔
উক্ত প্রতিবাদ মিছিলে সকলকে বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে ۔۔সকলকে অনুরোধ এই মিছিলকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য। কিন্তু খেলা শুরুর আগেই শেষ। বিজেপি সংগঠনের কঙ্কালসার চেহারা ফের সামনে চলে এলো।