মনরেগা প্রকল্পের টাকার দায়িত্ব নেওয়া উচিত রাজ্যেরও। রাজ্যের কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া না মিটিয়ে উল্টে এবার রাজ্যের ঘাড়ে দায় ঠেলল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের বেনজির প্রস্তাবের কড়া প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
একশো দিনের কাজ নিয়ে বেশ কয়েকমাস ধরেই বিভিন্ন স্তরে আন্দোলন চলছে। বিশেষ করে বাংলা সহ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি একশো দিনের কাজের বকেয়া মেটানোর দাবিতে সোচ্চার। তৃণমূল কংগ্রেস এই নিয়ে বারবার সোচ্চার হয়েছে সংসদে। এরই মধ্যে বিতর্ক বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং মন্তব্য করেছেন, একশো দিনের কাজের আর্থিক বোঝা বহন করা উচিত রাজ্যেরও। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য রাজ্যগুলির ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ম*র্মান্তিক! জামা ইস্ত্রি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃ*ত্যু কলকাতা পুলিশের কনস্টেবলের
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার আধারের মাধ্যমে একশো দিনের কাজের মজুরি মেটানো বাধ্যতামূলক করার যে নির্দেশিকা জারি করেছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নারেগা সংঘর্ষ মোর্চা। আধারের মাধ্যমে একশো দিনের কাজে মজুরি বাধ্যতামূলক করা হলে ৫৭ শতাংশ শ্রমিক বাদ পড়বেন বলে জানিয়েছে তারা। এর মধ্যেই গিরিরাজ সিং সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, একশো দিনের কাজকে নিয়মিত কাজের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়। শুধুমাত্র যাঁরা কোনও কাজ পাচ্ছেন না, তাঁদের জন্যই এই প্রকল্প। কেন্দ্রের তরফে মোবাইল অ্যাপে একশো দিনের কাজে হাজিরা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে নারেগা সংঘর্ষ কমিটি। অন্যদিকে মনরেগা আইন সংশোধনের পক্ষে সওয়াল করে গিরিরাজ সিং বলেছেন, আমার মনে হয়, একশো দিনের কাজ বা মনরেগা আইন সংসদে সংশোধন করা দরকার। তার মাধ্যমে পুরোপুরি কেন্দ্রের অর্থ জোগানোর বিধি বদল করে কেন্দ্র ও রাজ্যের অনুদান ৬০ এবং ৪০ করা হবে।
যদিও বর্তমান আইন অনুযায়ী একশো দিনের কাজের খরচ বহন করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। তা সত্ত্বেও বহু রাজ্যের একশো দিনের কাজের খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রস্তাব সম্পর্কে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নির্মলা সীতারামনের উচিত এবার গিরিরাজ সিংয়ের ক্লাস নেওয়া। কারণ তিনি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক কথা বলেছেন। কে টাকা দেবে, সেটা স্থির করার মালিক গিরিরাজ সিং নন। আমি তো লোকসভায় বহুবার বিষয়টি তুলেছি। সেখানে তো মন্তব্যের প্রতিবাদ করা যায়। যদি সাহস থাকে গিরিরাজ সিং আগামী অধিবেশনে বিষয়টি তুলে প্রতিবাদ জানান। কেন্দ্র টাকা না মেটানোয় আমাদের রাজ্যের বকেয়া সাড়ে ৭ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ১৫ দিনের মধ্যে একশো দিনের মজুরির টাকা মেটাতে হয়। গত ৩০ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছিল, একশো দিনের কাজে আধারের মাধ্যমে মজুরি দেওয়া হবে। এই বিধি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এই বিষয়ে নারেগা সংঘর্ষ কমিটির নেতা নিখিল দে বলেছেন, এটা পুরো বেআইনি। আইন অনুযায়ী, একশো দিনের কাজের পুরো টাকাই দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। ২০০৫ সাল থেকে তো এই আইন চলছে। এখন কেন্দ্র বলছে, আইন সংশোধন করবে। বোঝাই যাচ্ছে, মনরেগা নিয়ে কেন্দ্রের আর কোনও আগ্রহ নেই। কেন্দ্রের এই বৈষম্যমূলক আচরণে সমস্যায় পড়ছেন অসংখ্য গরিব মানুষ।